সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচন ইস্যুতেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের সম্ভাবনা কম এবং যদি এই ইস্যুতে ঐকমত্য গড়ে না ওঠে, তাহলে নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অপরাপর দলগুলোর বিরোধ তৈরি হবে কি না এবং সেই বিরোধ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করবে কি না কিংবা নির্বাচনি প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত করবে কি না— সেই সব ভাববার অবকাশ রয়েছে।
Published : 03 Mar 2025, 10:40 AM
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এরপরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের দিনই সেকেন্ড রিপাবলিক এবং নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
এই দাবিটি তারা গত ডিসেম্বরেই জানিয়েছিল এবং ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ বা ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে’ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। যদিও সেই ঘোষণাপত্র এখনও প্রস্তুত হয়নি বা আদৌ এটি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। এরকম বাস্তবতায় নতুন দলের অভিষেক অনুষ্ঠানে সেই সেকেন্ড রিপাবলিক এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিটি এই মুহূর্তের বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক, কতটা যৌক্তিক, কতটা প্রয়োজনীয় ও বাস্তবসম্মত তা নিয়েও কথা উঠছে।
গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলেও এরপরে বিভিন্ন ইস্যুতে এই সংগঠনের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পার্থক্য তৈরি হয়েছে। যেমন তাদের দাবি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের পদত্যাগ বা অপসারণ। এমনকি রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি এখনও টিকে আছেন। সেনাপ্রধানও বহাল আছেন। তারা গত ডিসেম্বরেই জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও শেষ পর্যন্ত হয়নি মূলত এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে।
সরকারের তরফে বলা হয়েছিল যে, সরকার নিজেই সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র দেবে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তারপরে অর্ধ মাস পেরিয়ে গেলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের কোনো অগ্রগতি আছে বলে মনে হয় না। কেননা, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুয়েকটি রাজনৈতিক দল বাদে বিএনপিসহ অন্য কোনো দল এই ইস্যুতে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয় না।
সেই ধারাবাহিকতায় সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচন ইস্যুতেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের সম্ভাবনা কম এবং যদি এই ইস্যুতে ঐকমত্য গড়ে না ওঠে, তাহলে নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অপরাপর দলগুলোর বিরোধ তৈরি হবে কি না এবং সেই বিরোধ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করবে কি না কিংবা নির্বাচনি প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত করবে কি না— সেই সব ভাববার অবকাশ রয়েছে।
সেকেন্ড রিপাবলিক কী ও কেন
সেকেন্ড রিপাবলিক (Second Republic)-এর সহজ বাংলা হলো দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্র। প্রথম প্রজাতন্ত্র বা ফার্স্ট রিপাবলিক হয় কোনো একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে। সেটি হতে পারে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে কিংবা কোনো সমঝোতার মাধ্যমে। অর্থাৎ যখন একটি ভূখণ্ডের পৃথক ভৌগোলিক সীমারেখা, মানচিত্র ও পতাকা হয়, তখন আইনত একটি রাষ্ট্র হওয়ার জন্য তাকে রিপাবলিক গঠন করতে হয়।
দ্বিতীয় রিপাবলিকের ধারণাটিও সেরকম যে, কোনো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যদি দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয় কিংবা যদি একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়; ধরা যাক আগে রাষ্ট্রটি ছিল সমাজতান্ত্রিক, এখন সেটিকে গণতান্ত্রিক বা ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে, তখন সেকেন্ড রিপাবলিকের প্রশ্ন আসে।
ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৯২ সালে। তবে এর পতনের পর ১৮১৪ সালে রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। পরে ১৮৪৮ সালে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল এক ধরনের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যার মধ্যে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সাধারণ নাগরিকের অধিকারের প্রসার ঘটে। সেকেন্ড রিপাবলিকের পতন ঘটে ১৮৫২ সালে, যখন নেপোলিয়ন তৃতীয় ক্ষমতায় আসেন এবং সেকেন্ড এম্পায়ার প্রতিষ্ঠিত হয়।
পর্তুগালে ১৯১০ সালে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনা অভ্যুত্থানের ফলে ১৯২৬ সালে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং পরবর্তীতে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রিপাবলিক স্থায়ী হয়নি এবং ১৯৭৪ সালে ক্লেভি রেভলুশন ঘটে, যার ফলে পর্তুগাল পুরোপুরি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে ১৮৩০ সালে প্রথম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে। তবে ১৯৯০ সালে সেকেন্ড রিপাবলিক পুনরুদ্ধার হয় এবং চিলি আবার গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে আসে।
কিন্তু বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে কি এমন ঘটনা ঘটেছে যার ফলে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করতে হবে? বর্তমান রিপাবলিক কি ব্যর্থ হয়েছে? এখানে কি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে সমাজতান্ত্রিক বা ইসলামিক তথা শরিয়া আইননির্ভর একটি শাসনব্যবস্থা চালু করা হবে?
অস্বীকার করা যাবে না, বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থাটি গণতান্ত্রিক মডেলের হলেও, এর গণতান্ত্রিক চরিত্র অনেকখানি নষ্ট হয়েছে নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেজন্য কি নতুন রিপাবলিক গঠনের মতো বাস্তবতা তৈরি হয়েছে? দেশের মানুষ কি মনে করে যে বর্তমান রিপাবলিক ব্যর্থ হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও কি এ বিষয়ে একমত? যদি না হয় তাহলে সেকেন্ড রিপাবলিকের প্রশ্ন কেন এলো এবং কেনইবা বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে দিয়ে নতুন করে সংবিধান লেখার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে? জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি সরকারের পতন হয়েছে। কোনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি এবং বিপ্লবের যে সংজ্ঞা, চরিত্র ও কাঠামো— তার সঙ্গেও এই অভ্যুত্থানের মিল নেই।
বিপ্লব না অভ্যুত্থান?
গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত আন্দোলনটি যে বিপ্লব ছিল না, বরং এটি যে একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ছিল, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনরাও স্বীকার করছেন। ওই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অনেক খ্যাতিমান লোকও স্পষ্টত বলেছেন যে, জুলাইয়ের আন্দোলনটি ছিল একটি গণ-অভ্যুত্থান। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজও বলছেন, এটি বিপ্লব বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয়। বরং এটি গণঅভ্যুত্থান, গণমানুষের অভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান এই কারণে যে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচারকে হটানো হয়েছে। আর বিপ্লব বলব না এ কারণে যে, বিপ্লবের পর নেতৃত্বদানকারীরা সরকার গঠন করে। এক্ষেত্রে তা হয়নি। এটাকে আমি দ্বিতীয় স্বাধীনতাও বলব না। কারণ আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। (ডেইলি স্টার অনলাইন, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।
সুতরাং, গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে দেশে যে ঘটনা ঘটেছে, যে ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি সরকারের পতন হয়েছে এবং সরকারপ্রধানকে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে— সেটি যদি বিপ্লব না হয় এবং সেটি যে বিপ্লব, এই বিষয়ে যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয় এবং দেশের আপামর মানুষ যদি এটিকে বিপ্লব মনে না করে, তাহলে সেখানে সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।
কেন গণপরিষদ?
গণপরিষদ হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা একটি রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত হয়। এটি সাধারণত একটি দেশের স্বাধীনতার পরে বা মৌলিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় গঠিত হয়। গণপরিষদের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো, মৌলিক অধিকার, শাসনব্যবস্থা এবং অন্যান্য মৌলিক দিক নির্ধারণ করা। বিশেষত সংবিধান রচনা করা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরে ওই বছরের ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স বা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে— যেখানে বাংলাদেশকে একটি গণপ্রজাতন্ত্ররূপে ঘোষণা করা হয় এবং যেহেতু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, ফলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ীদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়। পরদিন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়, যা কার্যকর হয় প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে।
গত বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পরে সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেয়া, সংবিধানের কবর রচনা করার মতো বক্তব্যও দেয়া হয়েছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন সংবিধান প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সুতরাং যদি এই ঘটনাটি বিপ্লব না হয়, তাহলে সেখানে কোনো প্রক্লেমেশন বা বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করার প্রশ্নটি অবান্তর। এমনকি গণপরিষদ নির্বাচন দিয়ে নতুন করে সংবিধান রচনার প্রশ্নটিও অযৌক্তিক।
যারা এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন বা সামনের সারিতে ছিলেন, তাদের মধ্যে চারজন (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আসিফ নজরুল) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা (নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন) এবং তারা উপদেষ্টা হিসেবে যখন শপথ নিয়েছেন তখন সেখানে সংবিধানের সংরক্ষণের অঙ্গীকার করেছেন। উপদেষ্টা হিসেবে তারা যখন শপথ নিয়েছেন তখন বলেছেন, ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব’। (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮)। সুতরাং সংবিধান সংরক্ষণ ও সমর্থনের শপথ নেয়ার পরে সংবিধান বাতিল করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা যায় কি না— সেটি আরেকটি প্রশ্ন।
গত ৫ অগাস্টের পরে অব্যাহতভাবে বাহাত্তর সালে প্রণীত সংবিধান নিয়ে অব্যাহতভাবে বিষোদ্গার করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। তারা এই সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান, একনায়কতন্ত্রের জন্মদাতা ইত্যাদি অভিধায় আখ্যা দিয়ে এই সংবিধানের কবর রচনার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ সংবিধানের কোন কোন অনুচ্ছেদের কারণে ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানটি মুজিববাদী সংবিধান হলো বা কীভাবে এই সংবিধান ফ্যাসিস্ট তৈরি করে, সে বিষয়ে তাদের তরফে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
নাগরিক পার্টির কী করা উচিত?
এটা ঠিক যে, ১৯৭২ সালে গণপরিষদে গৃহীত হওয়ার পরে এ যাবৎ সংবিধানে যে ১৭ বার সংশোধন আনা হয়েছে, তার ফলে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র অনেকখানিক নষ্ট হয়েছে। এই সংবিধানের অনেক বিধান সংসদে এমপিদের কথা বলার স্বাধীনতা সীমিত করেছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য না থাকায় প্রধানমন্ত্রী একককভাবে অসীম ক্ষমতার অধিকারী। এসব নিয়ে দ্বিমত নেই এবং সংবিধানের এইসব ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে জুলাই মাসের আগেও অনেক কথা হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, লাখো মানুষের রক্তে লেখা সংবিধানটি ছুড়ে ফেলতে হবে বা কবর দিতে হবে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সংবিধানের কবর রচনা করার ঘোষণা দেয়া যায় কি না— সেটি বিরাট প্রশ্ন। ভবিষ্যতে এই প্রশ্নগুলো আরও জোরালো আকারে উঠবে।
সংবিধান চিরকাল একই জায়গায় স্থির থাকার বিষয় নয়। সুতরাং সংসদ যদি মনে করে কেনো বিধান পরিবর্তন করবে, সেই স্বাধীনতা তার আছে। একইভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি সংবিধানের যেসব অনুচ্ছেদকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করে, তারা ক্ষমতায় গিয়ে সেসব অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে পারে। সেজন্য তাদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে হবে। কোনো বিপ্লবী সরকার গঠনের মতো বাস্তবতা দেশে এ মুহূর্তে নেই। দেশের মানুষও কোনো বিপ্লবী সরকার চায় বলে মনে হয় না। সুতরাং জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মসূচি এবং নির্বাচনি মেনুফেস্টোতে সংবিধান বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থানের ঘোষণা থাকতে পারে। জনগণ যদি তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তাহলে তাদেরকে ভোট দেবে এবং তারা সরকার গঠন করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন করে সংবিধান লেখার জন্য গণপরিষদ গঠন করা বা সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করার মতো কোনো পরিস্থিতি বা বাস্তবতা দেশে তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না। তার চেয়ে বড় কথা এই ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠবে বলেও মনে হয় না।
মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করা যাবে না— সেটি হোক সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন অথবা গণপরিষদ নির্বাচন। সুতরাং জাতীয় নাগরিক পার্টির উচিত হবে তাদের এই কর্মসূচির ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা এবং জনগণের বিপুল সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা।