দলের কথা বললেন, নিজের কথা বললেন না মেয়র আরিফ

“বর্জন মানে শুধু প্রার্থী না হওয়া নয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়া।”

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 12:28 PM
Updated : 19 May 2023, 12:28 PM

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এক সভায় এসে এই সরকারের অধীনে যে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না সেটি আবারও উল্লেখ করেছেন; তবে তিনি নিজের ব্যাপারে এখনও কিছু খোলাসা করেননি।

শনিবার দুপুরে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে জনসভা করে দুইবারের মেয়র চলতি সিটি করপোরেশনে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। জনসভা নিয়ে আরিফের সমর্থকরা জোর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

তার ২৪ ঘণ্টা আগে শুক্রবার দুপুরে ১০ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন মেয়র আরিফ। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “আওয়ামী লীগের সময় শেষ। আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যতই বাধা আসুক না কেন ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে।”

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের পঞ্চমবারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ মে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন রয়েছে প্রার্থীদের। বিএনপি নেতা আরিফ নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না- এ নিয়ে দোলাচলে রয়েছে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররাও।

এই অবস্থার মধ্যে আরিফ লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন; ঢাকায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সিলেটের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন।

কিন্তু নিজের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি কখনই। ফলে শনিবারের সমাবেশে আরিফ কী ঘোষণা দেন এ নিয়ে চোখ রয়েছে নগরবাসীর।

সবশেষ শুক্রবার বিকাল থেকে পুলিশের অনুমতি নিয়ে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে আরিফের সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। প্রথমে অনুমতি না মিললেও পরে পুলিশ এসে মঞ্চ তৈরিতে সায় দেয়। সেখানে আরিফসহ দলের অনুসারী দলের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।     

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

“বর্জন মানে শুধু প্রার্থী না হওয়া নয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়া”

জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশ নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে করতে চেয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে তারা পরে মহানগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পথসভা করেছেন।

বিএনপি নেতারা জনসমাবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছে, রেজিস্ট্রি মাঠে জনসভা করার কোনো অনুমতি বিএনপির ছিল না।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “দেশের মানুষ যখন আন্দোলনমুখী, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সঙ্গে প্রহসন করছে। এই সরকার বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার নির্বাচনের নামে তামাশা করছে; নির্বাচনের নামে খেলা করছে। তাই বিএনপি এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে।”

“বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে দলের নির্দেশনা মেনে নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে শরিক হতে হবে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। দেশের জনগণও বিভিন্ন সিটিতে এই নির্বাচনকে বর্জন করেছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আরও ভালো খবর পাওয়া যাবে।

নজরুল বলেন, “নির্বাচন বর্জন করার মানে শুধু নিজে প্রার্থী না হওয়া নয়, বর্জন মানে হলো পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য প্রার্থীর পক্ষেও কাজ না করা। বিএনপি আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন তাদেরকে দল মনে রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। আওয়ামী লীগের সময় শেষ হয়ে গেছে, সারাদেশে মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে হবে।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, “সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সরকার মাঠটি পুলিশ দিয়ে দখল করেছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা আজ পুরো নগরী দখলে নিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগের সময় আর বেশি বাকি নেই, জনগণ রাস্তায় নেমেছে। আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত করে আমরা ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, “এই সরকারের সময় শেষ, তাই তারা আবল-তাবল বলতেছে। আগামী দিনে রাজপথ দখলের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।এই সরকারের পতন অনিবার্য।”

সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “দেশে আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন নেই। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর নামে হাজার হাজার মামলা রয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মী আজ কারাগারে বন্দি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে, তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে, আওয়ামী লীগের অধীনে এদেশে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।”

স্বাগত বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, “জনগণ এখন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। তাই জনগণও এই নির্বাচনকে বর্জন করবে।”

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম।

সমাবেশ শেষে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।