ব্রহ্মপুত্র রক্ষায় হাঁটু পানিতে নেমে গান ও কবিতায় প্রতিবাদ

ময়মনসিংহে নদ খননের সব টাকা ছাড় না হওয়ায় কাজ ধীর গতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2023, 03:45 PM
Updated : 5 May 2023, 03:45 PM

হাঁটু জলে নেমে গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের করুণ চিত্র তুলে ধরে অভিনব এক প্রতিবাদ জানিয়েছে ময়মনসিংহের সচেতন মহল।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাচারীঘাট এলাকায় নদে হাঁটু পানিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সংস্কৃতি কর্মী শামীম আশরাফের আয়োজনে ‘মৃতের চিৎকার’ নামে এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদ খননের নামে যে প্রহসন চলছে তার প্রতিবাদ জানানো হয়।

আয়োজকরা জানায়, কর্মসূচির পুরোটা সময় চলে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও আহাজারী। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সংস্কৃতিকর্মী এবং রাজনৈতিক নেতারাও সংহতি প্রকাশ করে হাঁটুজলে নেমে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান।

নদের মাঝে একটি চেয়ারের সামনে টেবিলে সব ধরনের খাবার থাকলেও ছিল না শুধু পানি। ব্রহ্মপুত্রের চারিদিকে সবকিছু আছে; যেন পানির অভাবে সে ক্ষুধার্ত। এ সময় নানা আর্তনাদ লেখা প্লে-কার্ড প্রদর্শন করা হয়।

উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ বলেন, “শিল্পের মানুষের চিন্তা নিয়ে সমন্বিত ভাবে ‘মৃতের চিৎকার’ আয়োজন করা হয়েছে। এই চিৎকার অনেকের কাছে হয়তো পৌঁছবে না। কিন্তু কিছু মানুষ প্রতিবাদে দাঁড়াতে চেয়েছি।

“এর আগেও আমরা নদ রক্ষায় কর্মসূচি পালন করেছি। এই নদটি যতদিন পর্যন্ত প্রাণ না ফিরে পাবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া জেলা জনউদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, “দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফেরাতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খনন কাজ।

“প্রায় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। খননের পর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি ৩০০ ফিট প্রশস্ত ও শুস্ক মৌসুমে ১০ ফুট গভীর থাকবে এমনটি কথা ছিল।

“কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙিক্ষত কোনো খনন হয়নি। যে নদ দিয়ে এই সময়ে লঞ্চ ও স্টিমার চলার কথা, সে নদ মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে।”

প্রশাসনের উদাসীনতা এবং খনন কাজে গাফিলতির কারণে নদের করুণ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন আয়োজকরা।

গত বছর ময়মনসিংহে এক সভায় ব্রহ্মপুত্র নদ খননের প্রধান প্রকল্প সমন্বয়কারী প্রকৌশলী খন্দকার রাকিবুল ইসলাম বলেছিলেন, “পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা উন্নয়নে ড্রেজিং শীর্ষক প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে।

“পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রথম দুই বছর নদের ড্রেজিং এবং পরবর্তী তিন বছর করা হবে রক্ষণাবেক্ষণ। আর চলতি বছরের জুন-জুলাই থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করবে জাহাজ।”

শুক্রবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে প্রকৌশলী খন্দকার রাকিবুল ইসলাম বলেন, “জুলাইয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত জাহাজ চলবে। উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রীর সিডিউল চাওয়া হয়েছে।”

তবে প্রকল্পের সব টাকা ছাড় না হওয়ায় খনন কাজ কিছুটা ধীর গতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন খন্দকার রাকিবুল।