“আমি কোনো ষড়যন্ত্র করলে সেটা হতে পারে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের সাথে।”
Published : 03 Feb 2025, 09:34 PM
সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হচ্ছে বলে আদালতে দাবি করেছেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ইজিবাইক চালককে ‘হত্যার পর লাশ গুমের’ মামলায় সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে এ দাবি করেন নুরুল ইসলাম সুজন।
আদালতে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজন বলেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। শুধু রাজনৈতিক কারণে আমাকে এই মামলায় আনা হয়েছে।
“আমি যেই লেভেলে আছি, যেই লেভেলে আমার অবস্থান, সেই লেভেলে আমি কোনো ষড়যন্ত্র করলে সেটা হতে পারে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের সাথে। কিন্তু একজন ইজিবাইক চালক, তার সাথে আমার কোনো বিরোধ নেই।”
পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, “আমার সাথে এই মামলায় সাবেক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। আমরা সবাই ষড়যন্ত্রের শিকার।”
“শুধু আমি না আমাদের বিরুদ্ধে এইভাবে সারা দেশে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হচ্ছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। যেহেতু আমি এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই, আদালত যেন আমার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করেন।”
পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ অগাস্ট দুপুর থেকে গুম হন ইজিবাইক চালক আল আমিন।
দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় ধরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে গত ১০ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা করেন আল আমিনের বাবা মনু মিয়া।
মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আল আমিন পেশায় ইজিবাইক চালক ছিলেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এজন্য তাকে শুরু থেকেই বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়া হত।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার বাসার সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
তখন এজাহারনামীয় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে অন্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে আল আমিন সড়কে লুটিয়ে পড়লে তার নিথর দেহ টেনেহিঁচেড়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। তখন থেকেই আল আমিনের সন্ধান নেই।
এ মামলায় নুরুল ইসলাম সুজনকে গত বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে তোলার পরে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই মানিক মিয়া।
পরে আদালত সুজনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে শনিবার বিকালে সুজনকে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে আসা হয়। সেই রিমান্ড শেষে সোমবার দুপুরে তাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসানের আদালতে হাজির করে সদর থানা পুলিশ।
শুনানি শেষে নুরুল ইসলাম সুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়া তিনি ১৬৪ ধারায় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেননিও বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন।
আইনজীবী সারোয়ার বলেন, “আমরা আজকে (সোমবার) আদালতে কোনো জামিনের আবেদন করিনি। জামিনের আবেদন মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া হবে। সুজন সাহেব সুস্থ আছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। আমরাও দেখেছি তিনি সুস্থ আছেন।”
সরকার পক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ইয়াছিনুল হক দুলাল বলেন, “বিগত দিনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। আমরা বর্তমানে যেহেতু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে চলছি, তাই আসামির রিমান্ডের আগে ও পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
“পুলিশ যাতে আসামিকে কোনো টর্চার করতে না পারে বা কোনো ধরনের উৎকোচ গ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়টি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদাহারণ।”
শুনানিতে সরকার পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আরও চার-পাঁচ জন আইনজীবী।
আর আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবি মির্জা সারোয়ার হোসেন, আলী আসমান বিপুল।
আরও পড়ুন
পঞ্চগড়ে 'হত্যার পর লাশ গুম': সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের জামিন নাকচ