ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তিন মাসের বেশি সময় পর মামলা করেন বাবা।
Published : 01 Dec 2024, 08:53 PM
পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ইজিবাইক চালককে ‘হত্যার পর লাশ গুমের’ মামলায় জামিন মেলেনি সাবেক রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের।
রোববার সকালে পঞ্চগড়ের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক আশরাফুজ্জামান শুনানি শেষে তার জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদম সুফী বলেন।
এর আগে শনিবার রাতে সাবেক এই রেলমন্ত্রীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় পঞ্চগড়ে আনা হয়। পরে রোববার সকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে তাকে আদালতে তোলা হয়।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় করা একটি হত্যা মামলায় ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার আল আমিন হত্যা ও গুমের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আল আমিন পেশায় ইজিবাইক চালক ছিলেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এজন্য তাকে শুরু থেকেই বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়া হত।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার বাসার সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
তখন এজাহারনামীয় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে অন্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে আল আমিন সড়কে লুটিয়ে পড়লে তার নিথর দেহ টেনেহিঁচেড়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। তখন থেকেই আল আমিনের সন্ধান নেই।
দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় ধরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে গত ১০ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা করেন ইজিবাইক চালক আল আমিনের বাবা মনু মিয়া।
মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফী বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধাকে হত্যার পর তার লাশ গুম করা হয়েছে। সাবেক এই রেলমন্ত্রীর নির্দেশে মামলার অন্য আসামিরা আল আমিনকে হত্যা করেন। আমরা প্রধান আসামির জামিনের বিরোধিতা করেছি। একইসঙ্গে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করি।”
শুনানির সময় বাদী মনু মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, “সাবেক এই রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুম ও খুনের অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বাদীর ছেলেকে নাকি সাবেক এই মন্ত্রীর হুকুমে মারধর করা হয়েছে। পরে তাকে নাকি আর পাওয়া যাচ্ছে না।
“আমরা আদালতে বলেছি, যেহেতু ভিকটিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেহেতু কোনোভাবেই এটি ৩০২ ধারার মামলা হতে পারে না। আমরা জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত তা নাকচ করে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তবে আদালত তাকে জেলকোর্ট অনুযায়ী ডিভিশন দিয়েছেন।”