ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিঘেরা লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে হঠাৎ রাষ্ট্রপতি

ছোটবেলার স্মৃতি বিজড়িত এই দোকানে মিষ্টিও চেখে দেখেছেন সাহাবুদ্দিন।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 09:36 AM
Updated : 16 May 2023, 09:36 AM

ছাত্র আন্দোলনের সময় পাবনার যে দোকানটিতে বসে দিনের পর দিন সবার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন, তুমুল আড্ডায় মেতে উঠতেন; স্মৃতি বিজড়িত সেই ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে হঠাৎ হাজির হলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। 

সোমবার রাতে হঠাৎ দোকানে রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখে আপ্লুত আর বিহ্বল হয়ে পড়েন দোকান মালিক। সাহাবুদ্দিন পুরনো দিনের কথা মনে করে স্মৃতি রোমন্থন করেন।   

নিরাপত্তা প্রটোকল কিংবা নির্ধারিত কর্মসূচির বাহিরে ছোটবেলার স্মৃতি বিজড়িত এই দোকানে মিষ্টিও চেখে দেখেছেন সাহাবুদ্দিন। 

১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ব্যবসা চলছে তিন পুরুষ ধরে। মধ্য শহরের রায়ের বাজারের এই দোকানের রসগোল্লা, প্যারা মিষ্টি পাবনার গণ্ডি ছাড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছে সারা দেশে। 

পাবনার মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল রাজনীতির ‘আঁতুড়ঘর’ বলা চলে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারকে। স্বাধীনতার আগে থেকেই পাবনার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতাদের আড্ডা বসত দোকানটিতে। রাজনৈতিক সফরে পাবনায় এসে এই দোকানে বসে মিষ্টি খেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও।  

সোমবার রাত ৮টা। হঠাৎ করেই শহরের ব্যস্ততম আব্দুল হামিদ সড়কে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দৌড়াদৌড়ি। একপর্যায়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরাও থমকে দাঁড়িয়ে যান। সড়কের দুই পাশে উৎসুক জনতার দৃষ্টি একটি মিষ্টির দোকানের দিকে। 

রাজনৈতিক এবং অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আড্ডা ও পদচারণার কারণে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নামও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কমরেড প্রসাদ রায়, কমরেড মনি সিংহসহ অনেকে এখানে আসতেন। 

সতীর্থদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনও। কর্মজীবনেও পাবনায় যখনই এসেছেন একবার হলেও ঘুরে যেতেন প্রিয় দোকানটিতে। তাই কঠোর নিরাপত্তাবলয় উপেক্ষা করে সরকারি সফরের প্রথম দিনে হঠাৎ করেই রাষ্ট্রপতি ফিরে যান পুরনো স্মৃতিময় আড্ডার জায়গায়।  

স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে গোপনে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ ঘোষ ও তার ছেলে নিমাই চন্দ্র ঘোষ। এ কারণে অনেকবার হামলাও হয়েছে দোকানটিতে, দেওয়া হয়েছে আগুন। 

লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান স্বত্বাধিকারী ভোলানাথ ঘোষ বলেন, “রাত ৮টার দিকে রাষ্ট্রপতি হঠাৎ করে দোকানে আসেন। এ সময় তাকে দেখে আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ি। সফরের প্রথম দিন যে তিনি আমাদের দোকানে আসবেন তা ভাবতেই পারিনি। এত খুশি হয়েছি যে কল্পনা করতে পারছি না।”  

ভোলানাথ ঘোষ আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতি ১০ মিনিট দোকানে অবস্থান করেন। তিনি পুরোনো অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন। আগে রাষ্ট্রপতি শহরের রূপকথা সড়কের জলযোগ থেকে শিঙাড়া ও আলুর চপ খেতেন। আজও তিনি জলযোগের শিঙাড়া খেয়েছেন।”  

জলযোগের ম্যানেজার ফজলে রাব্বি জানান, বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতির জন্য ৬০টি শিঙাড়া নিয়ে যাওয়া হয়।  

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘এই আনন্দ ও খুশি শুধু আমার মধ্যে নয়, সব পাবনাবাসীই এ খবর শুনে আনন্দিত হবেন। কারণ পাবনার কৃতী সন্তান তার শেকড় ভোলেননি।”  

পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, “এসব বিষয় সত্যিই আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তিনি যে আমাদের মানুষ, পাবনার ছাওয়াল, এটা কিন্তু আবারও প্রমাণিত হল।”  

রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু অধ্যাপক শিবাজিত নাগ বলেন, “তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আর হয়তো এভাবে আসতে পারবেন না। আমরা তাকে সব সময় মিস করব।” 

বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবি ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রপতি পাবনা প্রেসক্লাব, লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মিডিয়া সেন্টার ও ডায়াবেটিক সমিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন।”