দাবি পূরণের বার্তা আসার পর ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার এলাকায় উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
Published : 24 Apr 2025, 09:15 AM
উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলমকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি পূরণ হওয়ায় ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বুধবার রাত ১টার দিকে জুস পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙান।
তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বার্তা অনশনরত শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ‘সমস্যা নিরসন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে’ কুয়েটের উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন মঞ্জুরি কমিশনের এই সদস্য।
এর কিছুক্ষণ আগে বুধবার মধ্যরাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
ওই বার্তা আসার পর ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার এলাকায় উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা আনন্দ মিছিল বের করেন। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। তিন দিন আগে কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।
কীভাবে এই আন্দোলন ছয় দফা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হল, সে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাকে বলেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।
আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। তবে উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্য কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন।
দাবি পূরণ হওয়ায় ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে তারা হলে ফিরে যান।
আরও পড়ুন
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, হলও খুলেছে
কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা, অনশনে অনড় শিক্ষার্থীরা
কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার
কুয়েটে সংঘর্ষ: ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে
কুয়েট ঘিরে আবার উত্তেজনা, পুলিশ মোতায়েন