শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে তার জামিনের আদেশ দেন শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল।
Published : 01 Aug 2024, 06:08 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কিশোরকে জামিন দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে তার জামিনের আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম।
গত ১৯ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কলেজছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে কারাগারে পাঠান আদালত। তবে ১৬ বছর বয়সী আলফিকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন অগোচরেই ছিল।
পরে বুধবার একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় আলফির বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেইসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
আলফি গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। বর্তমানে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
আলফির আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মামলাটি মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ছিল। মাহিম কিশোর হওয়ায় মামলা স্থানান্তর হয়েছে। এর আগে ৪ অগাস্ট শুনানির দিন ছিল। কিন্তু আমরা নতুন করে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আদালত শুনানি গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।”
রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এদিন গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপ-পরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিন হাজার ব্যক্তিকে।
এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় মাহিমকে।
বুধবার তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো নিয়ে তার বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেইসবুকে লেখেন, গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারেন, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন তাকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
সেদিন সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও তার ভাইকে পাননি, পরের দিন কোর্ট থেকে কল করে মাহিমকে কারগারে পাঠানোর কথা জানান হয় বলে জানান স্নেহা।
তিনি আরও লেখেন, “আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ।
“মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেওয়া হলে– ডেট দেয় আগামী ৪ অগাস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দেবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।”
মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি।”
“কিন্তু, আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়।”
আরও পড়ুন:
কোটা: সাঈদের পরিবারকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সহায়তা
কোটা: রংপুরের ঘটনায় ৪ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি
কোটা: আবু সাঈদের দাফন, জানাজায় শোকাহত এলাকাবাসী
কোটা: 'ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে', সাঈদের বোনের আহাজারি
কোটা আন্দোলন: রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত, আহত শতাধিক