মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ শাবি শিক্ষার্থীরা 

বিকাল থেকে রাত অবধি ঝাঁকে ঝাঁকে মশার উৎপাতে শান্তিতে বসে থাকা যায় না; সন্ধ্যার পর পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।

নোমান মিয়া, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2022, 10:01 AM
Updated : 2 Nov 2022, 10:01 AM

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির মধ্যে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, দিনের বেলায় ক্যাম্পাসে মশার প্রকোপ আগে থেকে অনেক বেড়েছে। এছাড়া বিকাল থেকে রাত অবধি ঝাঁকে ঝাঁকে মশার উৎপাতে শান্তিতে বসে থাকা যায় না। সন্ধ্যার পর পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। আবাসিক হলগুলাতেও একই অবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মতই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে; তবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব সাদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মশা বেড়েছে। ফলে শান্তিতে বসার মতো পরিস্থিতি নেই। টং দোকান, ইউনিভার্সিটি সেন্টার কিংবা একাডেমিক ভবনের নিচতলা এবং এর উপরে সব জায়গাতেই মশা উৎপাত করছে। এটা একই সঙ্গে যেমন অস্বস্তির, তেমন ভীতিরও।

“বর্তমানে সারাদেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু আমাদেরকে অনেক ভুগিয়েছে। যদি আমরা সতর্ক না হই, মশা নিধন না করি, তাহলে মশাবাহিত রোগব্যাধি বেড়ে যেতে পারে।”

কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, তবে এটা কার্যকরী হচ্ছে না; এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের আরও জোড়ালো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

শাহপরাণ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, “মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা অসুস্থ হয়ে যাব। মশারী ছাড়া ঘুমানোটা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।”

একই কথা প্রথম ছাত্রীহলের শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার লিনাসহ আরও অনেকেরই।

হাবিবা বলেন, “আগে মশা তেমন ছিল না, এখন অনেক বেড়েছে। মশারি আর কয়েল ছাড়া রুমে ঘুমানো যায় না। মশা কানের কাছে ভনভন করে। বিশেষ করে হলের নিচতলায় মশা তুলনামূলক বেশি।”

পড়তে বসলে মশা কামড়াচ্ছে; এজন্য ডেঙ্গুর ভয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।  

এ কারণ হিসেবে ক্যাম্পাসের ময়লা আবর্জনাকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

শাবির শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীণ এক্সপ্লোর সোসাইটির’ সভাপতি মাকসুদুল হোসেন ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মশার উপদ্রব বা বংশবিস্তারের মূল কারণ বৃষ্টিপাত। বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি থেকেই মশা বংশবিস্তার করছে।”

সম্প্রতি ক্যাম্পাসে নালাগুলোতে ময়লা আবর্জনা জমে থাকায় মশা উৎপাত বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি।

“ক্যাম্পাসের ময়লা এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। টং দোকানগুলোর আশপাশে ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায়, নালাগুলোতে ময়লা আবর্জনা মিশে থাকায় পানি চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে।”

কিছুদিন আগে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি ও সিত্রাংয়ের বৈরী আবহাওয়ায় ক্যাম্পাসের নালাগুলোতে পানি জমেছে।

‘বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে’ মশার উপদ্রবের কারণ হিসেবে দেখছেন শাবির জিইবি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক প্রধান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঋতু অনুযায়ী এখন শীত হওয়ার কথা, কিন্তু তা আসছে না। এখনও গরম রয়ে গেছে। এমন তাপমাত্রা মশা প্রজননের জন্য উপযোগী। 

“এছাড়া ক্যাম্পাসে পানির যে বডিগুলো আছে, তাতে পানি জমা আছে; অনেক কিছুই ক্লিন বা পরিষ্কার না। বিভিন্ন কারণে ওয়াটার বডির পরিষ্কারের অভাব আছে। এজন্য মশার উৎপাতটা বেশি।”

অনেকগুলোই পরিষ্কার আছে, তবে আরও পরিষ্কারের দরকার, বলেন তিনি।

এদিকে দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনসহ বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান।

এডিস মশার লার্ভার বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এডিস মশার লার্ভা ৭০ শতাংশ থাকে বাসা-বাড়ির ভিতরে। পচা নর্দমা বা ময়লাযুক্ত স্থানে এডিস মশা জন্মায় না। এখানে সব কিউলেক্স মশা জন্মায়।

“ভাঙা বোতল যদি পড়ে থাকে, এটার মধ্যে পানি জমলে এডিস মশা জন্মাবে। আবাসিক হলের ছাদের উপরে জমা পানি বা পানির ট্যাংকির নিচে যে পানি জমে থাকে তাতে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে।”

শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের রুমের পাশে যদি ফুলের টবে পানি জমে থাকে, এতেও এডিসের লার্ভা  জন্মাতে পারে। চায়ের কাপ, বোতলে, চিফসের একটি প্যাকেট বা পলিথন ফেলা হলে সেখানে যদি বৃষ্টির পানি জমে থাকে তাহলে এডিসের লার্ভা জন্মাবে, বলেন তিনি।

এজন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এদিকে শাবিতে প্রতি সপ্তাহে ফগার মেশিন দ্বারা মশার ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ওষুধ ছিটানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলেন, ফগার মেশিনে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু যখন প্রয়োগ করা হচ্ছে মশা ওই সময় উড়ে যায়। মশার বাচ্চা দুইদিন বা একদিন পর উড়ে আবার চলে আসে। কিন্তু এত বড় ক্যাম্পাসে প্রতিদিন তো একই জায়গায় দেওয়া সম্ভব না।

রোস্টার অনুযায়ী ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মশার ওষুধ স্প্রে করা হয় বলে জানান তিনি। 

তার ভাষ্য, “ওষুধ দিতে গেলেও একজন বলে দিতে, আরেকজন এটার বিরোধিতা করে। না দিলেও সমস্যা, আবার দিলেও সমস্যা।”

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষও বলছে মশার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা চেষ্ট করছি। স্প্রে করে নিয়মত মশা নিধনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।”