২০ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় ২ নেতাকে এক বছরের বহিষ্কার ও মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
Published : 19 Dec 2024, 08:38 PM
ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জেরে মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও এর সমালোচনা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবিলম্বে তুলে নিয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ তিন দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের একদল শিক্ষার্থী নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও বিক্ষোভ করে।
শিক্ষার্থীদের বাকি দুই দাবি হল- ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে বিগত প্রশাসনের করা বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে হবে এবং ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের হামলার প্রত্যক্ষ মদতদাতা ও অমর্ত্য-ঋদ্ধর বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি জানানো শিক্ষক সোহেল আহমেদকে অবিলম্বে উপ-উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান দাবিগুলোর বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালে আন্দোলনকারীরা বেলা দুপুর সোয়া ১টার দিকে অবরোধ ছেড়ে দেন।
এ সময় উপাচার্য মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসও দিয়েছেন।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি চিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকেন জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। সেই দেয়ালচিত্রে তারা ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ শীর্ষক একটি বাক্যজুড়ে দেন।
গ্রাফিতি নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে পরের দিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি অঙ্কনকারীরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জোগাতে এবং নিপীড়কদের হুঁশিয়ারি দিতে নতুন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটি প্রায় তিন বছর পার হওয়ায় অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া পাশের দেয়ালে শেখ মুজিবের একটি বিশাল, স্পষ্ট ও নান্দনিক চিত্রকর্ম দৃশ্যমান ছিল। তাই চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে এই গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে।
তাদের দেওয়া বিবৃতির পরও বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে দেয়ালচিত্র অঙ্কনকারীদের শাস্তির দাবিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন ছাত্রলীগের দুই নেতা এনামুল হক ও রিয়াজুল ইসলাম৷
টানা চারদিনের অনশন শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের আশ্বাসে ডাবের পানি খেয়ে অনশন ভাঙেন ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করে তৎকালীন প্রশাসন। চার সদস্যের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে এক বছরের বহিষ্কার ও রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ সেই মামলাতেই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর বলেন, ৫ অগাস্টের আগেই তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মামলায় রূপান্তর হয়েছে। আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও গ্রেপ্তার করা হবে না এবং মামলা ‘ডিসমিস’ করা হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম।
তিনি একজন উপদেষ্টার বরাতে বলেন, “শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মুছে ফেলার মামলায় অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অতিদ্রুত বাতিল করা হবে। কোনো গ্রেপ্তার হবে না। মামলা ডিসমিস করার বিষয়েও আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে।”
এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, “বিগত প্রশাসনের লোকজন পালিয়ে গেলেও তাদের করা মামলা আর বহিষ্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে নতুন প্রশাসনের কাছে বারবার বহিষ্কার ও মামলা প্রত্যাহার করতে বলার পরেও তারা কর্ণপাত করেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “আন্দোলনকারীদের প্রথম দুইটা দাবি যেহেতু সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেহেতু সিন্ডিকেট সভা না করে এই দুই দাবি মানা সম্ভব না। সামনের সিন্ডিকেট সভায় এটি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তৃতীয় দাবিটি বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ আমরা নই।”
বারবার বলার পরও প্রশাসন কেন কর্ণপাত করেনি জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, তারা একবার একটা দাবিনামায় মামলা তুলে নেওয়া ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানায়। ৫ অগাস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় শত সহস্র দাবি আর দফা আসে, সবকিছু বিবেচনায় এই এজেন্ডা হয়তো সামনে আসেনি। এখন যেহেতু নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সামনের সিন্ডিকেটে এটি আনা হবে।
“বর্তমান বাস্তবতায় সিন্ডিকেট সভাও করা যাচ্ছে না, কোরাম পূর্ণ না হলে তো সিন্ডিকেট সভা করা যায় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”