“ওই নারী শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার পর ছুটি দিলে হয়তো তাকে এভাবে মরতে হতো না।”
Published : 03 Mar 2025, 02:43 PM
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর এবং কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেন।
বিক্ষোভের কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে তিন ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে টায়ার ও কারখানার সামনে রাখা একটি গাড়ি মহাসড়কে এনে আগুন দেয়। ওই ঘটনার পর আশপাশের ১৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার সকাল ৮টার দিকে ‘প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড’ কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। শ্রমিকরা বলছেন, আফসানা আক্তার নামে এক নারী শ্রমিক রোববার কারখানায় কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ছুটি চান। তিনি অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটি দিতে অসম্মতি জানায়। পরে তিনি মারাও যান।
মৃত নারী শ্রমিক আফসানা আক্তারের বয়স ৩০ বছর। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল পাচরুখী এলাকার হৃদয় খানের স্ত্রী।
প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক আসাদুল ইসলাম বলেন, “রোববার কারখানার এক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চান। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। পরে হঠাৎ জানতে পারি সে কারখানার ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে।”
অপর শ্রমিক আসমা আক্তার বলেন, “ওই নারী শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার পর ছুটি দিলে হয়তো তাকে এভাবে মরতে হতো না।”
এদিকে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানার সাততলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে রোববার বেলা দেড়টার দিকে আফসানা আক্তার আত্মহত্যা করেন। ওই তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেটি জানাজানি হলে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিকরা ভোগরা বাইপাস এলাকায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে মহাসড়কে টায়ার ও কারখানার সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এছাড়া কারখানার একটি ব্যাক্তিগত গাড়ি রাস্তায় টেনে নিয়ে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ঘটনার পর থেকে আশপাশের ১৫টি কারখানা আজকের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
“পরে বেলা ১১টা থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা।”
পুলিশ সুপার বলেন, “নারী শ্রমিকের কারখানা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। সেটি আমাদের দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার এই আত্মহত্যার পেছনে স্বামীর প্ররোচণা রয়েছে। এজন্য তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”