চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযানে ধরা পড়েছেন নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষনেতা সোহেল মাহফুজ, তিনি গুলশান হামলার গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
Published : 08 Jul 2017, 10:58 AM
শনিবার ভোররাতে শিবগঞ্জ উপজেলার পুষ্কনী গ্রামে অভিযান চালিয়ে সোহেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মোজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সোহেল মাহফুজ ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার আসামি। অন্য তিনজনসহ তারা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য।”
ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে জেলা পুলিশ এই অভিযানে অংশ নেয় বলে জানান পুলিশ সুপার মোজাহিদ।
তিনি জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে পুষ্কনী গ্রামের একটি আমবাগানে ‘বৈঠকের সময়’ ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর সোহেলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোববার তাকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সোহেল (২৫) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর কাবলিপাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে। তিনি শাহাদাত, নসরুল্লাহ, রিমন নানা নামে পরিচিত বলে পুলিশ জানায়। এক হাত না থাকায় তিনি ‘হাতকাটা সোহেল’ নামেও পরিচিত।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরমোহনপুর গ্রামের ইয়াসিনের ছেলে নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক জামাল ওরফে মোস্তফা (৩৪), শিবগঞ্জ উপজেলার পর্বতীপুর গ্রামের আফজাল হোসেনর ছেলে নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান ওরফে হাসান (২৮) এবং একই উপজেলার বিশ্বনাথপুর কাটিয়াপাড়া গ্রামের এসলামের ছেলে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য জুয়েল ওরফে ইসমাইল (২৬)।
সোহেল মাহফুজ ও জুয়েল শিবগঞ্জের শিবনগর গ্রামে গত ২৬ এপ্রিল জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’র ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় এবং এবছর ২৪ মে নাচোল থানার আরেকটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
এক বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল। হামলা ঠেকাতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা তামিম চৌধুরী ওই হামলার অস্ত্র এবং সোহেল গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশ পরে জানায়।
তামিম মাসখানেক পর নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত হলেও সোহেলকে এতদিন ধরে খুঁজছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোহেলসহ পলাতক পাঁচজনের কারণে নজিরবিহীন এই হামলার মামলার অভিযোগপত্র আটকে আছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলে আসছেন।
এই পাঁচজনের মধ্যে সোহেল ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটকে।
গুলশান হামলার তদন্তকারী কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, গুলশান হামলার আরও আগে থেকেই জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন সোহেল মাহফুজ। তিনি জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য।
“দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা সোহেল গত দুই বছর আগে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয় বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।”
কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী নব্য জেএমবি গড়ে তোলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
মনিরুল বলেছিলেন, “এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, (গুলশান হামলায়) গ্রেনেড সরবরাহ করে সোহেল মাহফুজ।”
হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিবরাজ ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তখনই কমান্ডো অভিযানে নিহত হন।
এরপর বিভিন্ন অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, আবু রায়হান তারেক, সারোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ মোতালেব ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ ওই হামলায় কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানান মনিরুল।
এছাড়া গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ‘রাজীব গান্ধী’ ও রাকিবুল হাসান রিগান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।