জেএমবির ভারত শাখার আমির ছিলেন সোহেল: পুলিশ

গুলশান হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত সোহেল মাহফুজ জেএমবির ভারত শাখার প্রধান ছিলেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2017, 11:23 AM
Updated : 8 July 2017, 07:55 PM

শনিবার ভোররাতে চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জের একটি আমবাগান থেকে সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে গত বছরের হামলায় জড়িত সন্দেহে তাকে খুঁজছিল পুলিশ। অন্যদিকে তিন বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণকাণ্ডেও তাকে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

খাগড়াগড়ে সন্দেহভাজন নসরুল্লাহই বাংলাদেশের সোহেল মাহফুজ বলে দাবি করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সে ভারতে অবস্থান করছিল এবং সেখানকার জেএমবির আমিরের দায়িত্বে ছিল। তখন সেখানে তার নাম ছিল নসরুল্লাহ।

“ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএয়ের কাছে খাগড়াগড়ের ঘটনার জন্য সন্দেহভাজন ছিল নসরুল্লাহ।”

সোহেল (২৫) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর কাবলিপাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে। তিনি নসরুল্লাহ ছাড়াও শাহাদাত, রিমনসহ নানা নামে পরিচিত বলে পুলিশ জানায়। এক হাত না থাকায় তিনি ‘হাতকাটা সোহেল’ নামেও পরিচিত।

পুলিশ কর্মকর্তা মান্নান বলেন, “২০০৫ সালে নওগাঁর আত্রাই এলাকায় বাংলাভাইয়ের সঙ্গে বোমা বানাতে গিয়ে সোহেলের একহাত উড়ে গিয়েছিল।”

গুলশান হামলার আরও আগে থেকেই পুলিশের কাছে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন সোহেল। তিনি জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

দুই বছর আগে সোহেল নব্য জেএমবিতে যোগ দেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মাঝের সময়টাতে ভারতে ছিলেন সোহেল। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে যে জঙ্গি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হন, তা ছিল জেএবির আস্তানা। ওই ঘটনার পর সোহেল পালিয়ে এসে বাংলাদেশে নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়।

 

মান্নান বলেন, “বর্তমানে সে (সোহেল) নব্য জেএমবির অন্যতম শূরা সদস্য। নব্য জেএমবির নুরুল ইসলাম মারজান তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।

“জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার আত্মীয়তা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তার দুই শ্বশুরবাড়ি। তার দুই শ্বশুরও জেএমবির সমর্থক।”

সোহেল ভারতে অবস্থানের সময় তার দুই স্ত্রীও সেখানে ছিলেন। এখন তারা দুজন সাত সন্তানসহ বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মান্নান।

উপ-কমিশনার মান্নান বলেন, “সোহেল এক জায়গায় বেশিদিন থাকত না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর ও নওগাঁয় ঘুরেফিরে ছিল সে।”

সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, শীর্ষ এই জঙ্গি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন।

“পুলিশের কাছে তথ্য ছিল জেএমবির সোহেল নামের একজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছে। তবে খাগড়াগড়ে হামলার আগে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার ব্যাপারে তেমন তথ্য ছিল না। ”

ওই হামলার পর সোহেল বাংলাদেশে এসে সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে ছিলেন বলে জানান মনিরুল।

“তার একটা হাত না থাকায় সে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার চেষ্টা করত।”

ভারতীয় পুলিশ বিভিন্ন সময়ে সোহেলের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। তারা সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে বলে মনে করেন মনিরুল।

বর্ধমান হামলার পর ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঢাকায় এসেছিলেন এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তথ্য বিনিময়ও করেন তারা।

‘হলি আর্টিজানের তদন্ত একধাপ এগুলো’

সোহেলসহ কয়েক জঙ্গি ধরা না পড়াকে গুলশান হামলার গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির তদন্ত আটকে থাকার কারণ দেখাচ্ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

“সোহেল মাহফুজ এই হামলার পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। ওই হামলার জন্য সে বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিল। তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজান হামলার তদন্ত আরেকধাপ এগিয়ে গেল,” বলেন মনিরুল ইসলাম।

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা চালানোয়ও তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর জঙ্গি আস্তানায় অভিযানেও তার নাম এসেছে।

“মৌলভীবাজারে মাইনুল ইসলাম মুসা যেখানে নিহত হয়েছে, সেই আস্তানা ঘিরে ফেলার সময়ও মূসা তার (সোহেল) সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছিল, ‘তাগুতি বাহিনী আমাদের ঘিরে ফেলেছে, আমরা আত্নসমর্পণ করব না’। মূসা নিজে নওগাঁয় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক কেনার জন্য টাকা দিয়ে এসেছিল।”

হলি আর্টিজানের তদন্তে পলাতক আরও চার জঙ্গির খোঁজে রয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে দুজনের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তারা হলেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “নব্য জেএমবির সদস্যদের স্পেস এখন কমে আসছে। অর্থের মজুদও কমে আসছে। সোহেল যেখানে পালিয়ে ছিল সেখানে অস্ত্র ও বোমা মজুদ ছিল না। অনেকটা বিনা প্রতিরোধেই তাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চারটি ইউনিটের সদস্যরা গ্রেপ্তার করে।”

রোববার সোহেলকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান মনিরুল।