‘বর্ধমানকাণ্ডে দুই দেশের জঙ্গিরাই’

বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশ- দুই দেশের জঙ্গিরাই যে জড়িত, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2014, 12:44 PM
Updated : 24 Dec 2014, 12:19 PM

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) আমন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে এসে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোববার এ কথা জানান। 

প্রতিনিধি দলের সদস্য পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্ধমানের ঘটনায় দুই দেশের জঙ্গিরাই জড়িত ছিল।

“এক দেশ অপর দেশকে দোষারোপের কিছু নেই। কোনো কনফিউশন নেই যে বর্ধমানের ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গিরা জড়িত ছিল।”

দুই মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের ওই বিস্ফোরণকাণ্ডে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এলে তথ্য বিনিময়সহ সন্ত্রাস দমনে একযোগে কাজ করতে একমত হয় প্রতিবেশী দুই দেশ।

এরপর এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৭ নভেম্বর ঢাকায় এসে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন এবং তারা জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে একমত হন।

এরপর তাদের আমন্ত্রণে ২৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সফর করে বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার শেখ রহতুল্লাহ সাজিদ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মাসুম। আর ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত শাকিল টাঙ্গাইলের শাকিল গাজী।

“ওই ঘটনায় জেএমবির জঙ্গি সালেহীন, বোমারু মিজান ও তরিকুল জড়িত ছিল। তবে সংখ্যার দিক থেকে ভারতের জঙ্গিই বেশি ছিল।”

বাংলাদেশের গোয়েন্দারা সাজিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছেন কি-না জানতে চাইলে এআইজি মাহফুজ বলেন, “আইনগতভাবে আমরা তা পারি না। তবে আমাদের বেশ কিছু প্রশ্ন এনআইএর মাধ্যমে সাজিদের কাছে পাঠানো হয়। এনআইএর কর্মকর্তারা সেই প্রশ্নগুলো সাজিদকে জিজ্ঞেস করে আমাদের উত্তর জানিয়েছেন।”

তিনি জানান, পলাতক জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। ভারতও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে।

এনআইএ সদস্যরা তাদের সফরে ১১ জনের একটি তালিকা দেয়, যারা বাংলাদেশে পালিয়ে আছে বলে তাদের সন্দেহ।

অন্যদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে ১০ জঙ্গিসহ ৫১ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয় এনআইএকে, যারা ভারতে পালিয়ে আছেন বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ধারণা।  

ওই তালিকায় থাকা জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছেন জেএমবির বর্তমান আমির সোহেল মাহফুজ, ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান, আনোয়ারুল ইসলাম, সাখাওয়াত ও আবু সাঈদ শেখ হোসাইন।

এনআইএ ছাড়া ভারতের অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, “অন্য কোন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। তবে একজন পুলিশ কমিশনার ও একজন আইজির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।”

ভারত সফরের সার্বিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ও এআইজি মাহফুজ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি জিএম আজিজুর রহমান, এনএসআইয়ের পরিচালক আবু হেনা মো. মোস্তফা, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, সিআইডির এসএস আশরাফুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন।

তবে ব্যক্তিগত কাজ থাকায় মনিরুল ও আবুল কালাম আজাদ ফেরেননি বলে মোস্তাফিজুর রহমান জানান।