সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের পরও পশ্চিম পাশে ভাতারিয়া আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্ততা কম থাকায় সেখানে কয়েক বছর ধরেই ঈদের সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
Published : 07 Apr 2024, 08:16 PM
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক ও জনপথ নতুন করে সড়কবিভাজক নির্মাণ করায় ওই পথে ঘরমুখো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যানবাহনের চাপের কারণে রোববার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা ওই স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় ১০টার পর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় প্রতিবছরই দুই ঈদে কমবেশি যানজটের সৃষ্টি হত। সেই যানজট নিরসন করতে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারটি দিয়ে জয়দেবপুরের দিক থেকে টাঙ্গাইলের দিকে এবং টাঙ্গাইলের দিক থেকে জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াতকারীরা সহজেই চলে যেতে পারছেন। আর সাভারের নবীনগরের দিকে যেসব গাড়ি চলাচল করে, সেগুলো নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে।
কিন্তু ফ্লাইওভারটি নির্মাণের পরও পশ্চিম পাশে ভাতারিয়া আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্ততা কম থাকায় সেখানে কয়েক বছর ধরেই ঈদের সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সেখানে কখনো কখনো চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ির টেইল সৃষ্টি হয়ে যায়। ওই স্থানের সড়ক প্রশস্ত না করে কয়েক দিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি সড়কবিভাজক নির্মাণ করে একটি সাব লেইন তৈরি করে। উত্তরবঙ্গগামী যেসব গাড়ি চন্দ্রা এলাকা থেকে যাত্রী ওঠাবে বা নামাবে, তারা ওই লেইন দিয়ে চলাচল করবে। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবহন ওই লেইন ব্যবহার না করে সরাসরি মূল লেইন দিয়ে চলাচল করছে। সামনের দিকে গিয়ে তারা সরাসরি যাওয়ার লেইনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে ও নামাচ্ছে। এতে সেখানে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি হয়ে দীর্ঘ সারি হয়ে যাচ্ছে।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার মো. আসলাম মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশে ভাতারিয়া আঞ্চলিক সড়কের মাথায় আগে সামান্য যানজট হতো। এখন সড়কবিভাজক তৈরি করায় উত্তরবঙ্গের বাসগুলো সরাসরি লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করায় যানজটের হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, ফ্লাইওভার অতিক্রম করার পর সড়কবিভাজকের কিছু অংশ ফাঁকা রাখার, যাতে যাত্রী ওঠানোর জন্য বা নামানোর জন্য বাসগুলো বাঁয়ের লেইনে চলে আসতে পারে। কিন্তু সড়ক ও জনপথের লোকজন আমাদের কথা শোনেনি। এখন সেই ফল ভোগ করতে হচ্ছে।”
এ ব্যাপারে কথা বলতে গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরীফুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব পিপিএম জানান, চন্দ্রা কেন্দ্রিক তিন শিফটে ভাগ হয়ে পুলিশ কাজ করছে। এর মধ্যে ৫৯৭ জন পুলিশ সদস্য ট্রাফিক ডিউটির কাজ করছে। এছাড়াও থানা পুলিশসহ এক হাজারের ওপরে পুলিশ সদস্য চন্দ্রা কেন্দ্রিক মোতায়েন রয়েছে। মোড়ের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিনা কারণে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
নাওজোড় হাইওয়ে ওসি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “সরকারি ছুটি শুরু না হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘরমুখো মানুষ যাওয়া শুরু করেছে। তখন থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে; বিশেষ করে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে। সকালে কিছু সময় যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল, তবে এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক।”
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক।
শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আব্দুল্লাহ্পুর থেকে জৈনাবাজার পর্যন্ত কোনো যানজট চোখে পড়ে নাই।”
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী ইসলাম পরিবহনের চালক আরশেদ হোসেন বলেন, “মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও অন্য বছরের তুলনায় কম। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে।”
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহবুব মোর্শেদ বলেন, “ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। একটি টিম মোড়ে মোড়ে যানজট নিরসন, আরেকটি টিম মহাসড়কে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি নিয়ন্ত্রণসহ যাত্রীদের চলাচলে সহযোগিতা করছে। সব মিলিয়ে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।”
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, “এবারের ঈদযাত্রা অন্যান্য বারের যাত্রার থেকে স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। এবার চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দুটি উড়াল সড়কসহ টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সাতটি ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় আমরা এ আশা করছি।”
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। গত বছরও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক ছিল।