২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরী মারা গেলেও ভিন্ন নামে সাভারের বিরুলিয়ায় একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।
Published : 29 Dec 2024, 09:52 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরীকে সিলেটের কানাইঘাটে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।
রোববার বাদ আসর হারিছ চৌধুরীর জন্মস্থান কানাইঘাটের দিঘীরপাড় ইউনিয়নের সাতবাঁক শাহী ঈদগাহ মাঠে নিয়ে আসার পর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত হন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে ‘গার্ড অব অনার’ শেষে বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানা প্রাঙ্গণে হারিছ চৌধুরীর কফিনে মোড়ানো লাশ দাফন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরিন, গোয়াইনঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলাম, কানাইঘাট সার্কেল এএসপি অলক কান্তি শর্মা, থানার ওসি আব্দুল আউয়াল, হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনারা চৌধুরী, মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরীসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
দাফনের আগে সাতবাঁক শাহী ঈদগাহ মাঠে হারিছ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়ছল আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুন রশিদ মামুন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুন রশিদ, সহসভাপতি জসীম উদ্দিন, ওয়েছ আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সাজ উদ্দিন সাজু, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান।
এদিকে, দুপুরে সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ ময়দানে হারিছ চৌধুরীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন সাধারণ মানুষ ও বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী ও হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী।
এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সহক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহজালাল দরগাহ মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফিজ মাওলানা হুজায়ফা হোসাইন।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, “অবশেষে আমার বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, মরদেহ সিলেটে নিয়ে আসা হয়েছে। স্বৈরাচার তাকে ঠেকাতে পারেনি। দেশে আবার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি সুবিচার পেয়েছি। আমার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি। সিলেটের সন্তান সিলেটে ফিরে এসেছেন এবং তার শেষ ইচ্ছেমতো কানাইঘাটে তার দাফন হবে।
“অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা এখানে এসেছি। এতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা। সেই সঙ্গে যারা বাধা দিয়েছেন, তারা জিততে পারেননি।”
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরী মারা গেলেও ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার পরিচয় গোপন করে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান নামে সাভারের বিরুলিয়ায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যিন মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।
পরবর্তীতে মেয়ে সামিরার এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। লাশ তোলার পর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডি নমুনা সংগ্রহ করে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টে লাশটি হারিছ চৌধুরীর নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটে দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ নমুনা দিলেন মেয়ে
মাহমুদুর রহমান নামে দাফন, হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতে তোলা হল লাশ