বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা তখন পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় বড়দিনের অনুষ্ঠানে; আগুনে তাদের ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে যায়।
Published : 26 Dec 2024, 01:55 AM
বান্দরবানের লামা উপজেলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
বুধবার মধ্যরাতে এক বার্তায় সরকারপ্রধানের দপ্তর বলেছে, “বান্দরবান পুলিশ জানিয়েছে যে তারা ঘটনাস্থলে তাদের কর্মকর্তা পাঠিয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চালিয়েছে। এই ঘটনার একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।”
বুধবার গভীর রাতে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওর্য়াডে নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন লামা থানার ওসি এনামূল হক ভূঞা।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, বড়দিন উপলক্ষে বুধবার রাতে পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় অনুষ্ঠান চলছিল। বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা সবাই সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তখন আগুনে বেতছড়া পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, পাড়ার সব ঘরবাড়ি বাঁশ ও শনের তৈরি। টংগ্যাঝিরি থেকে বেতছড়া পাড়ায় আসতে আধাঘণ্টার মত সময় লাগে। আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই এসে দেখেন, ১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিৃতিতে বলা হয়, “বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ প্রধান বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে যাবেন। তাদেরকে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।''
বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা অজারাং ত্রিপুরা বলেন, বুধবার রাতে বড়দিনের উৎসবে যোগ দিতে তারা সবাই টংগ্যাঝিরি পাড়ায় যান। প্রার্থনা শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা নিজেদের পাড়ায় আগুন জ্বলতে দেখেন।
ঘটনার সময় তাদের পাড়ার বাসিন্দারা কেউ বাড়িতে ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরে পাড়া ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাই বিভিন্ন শঙ্কা থেকে পাড়ায় কাউকে রেখে যাওয়া হয়নি।”
তিনি অভিযোগ করেন, “পাড়ার অনেক ঘর লাগোয়া হলেও কিছু ঘর খানিকটা দূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়েও আছে। নিজে থেকে সেসব ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই।”
কারা হুমকি দিচ্ছিল জানতে চাইলে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি তিনি।
টংগ্যাঝিরির বাসিন্দা জনি ত্রিপুরা বলেন, “এই পাড়ার ভূমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের লোকজন তাদের কেনা জায়গা বলে দাবি করে আসছিল। যার কারণে এটা ‘এএসপি জায়গা’ হিসেবে পরিচিত রয়েছে।”
টংঙ্গ্যাঝিরি আরেক বাসিন্দা গনেশ ত্রিপুরা বলেন, “তাদের মাত্র দুটি ঘর অক্ষত আছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত আমাদের পাড়ায় এসে (টংঙ্গ্যাঝিরি পাড়ায়) আশ্রয় নেবে। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ইউনিয়নের পরিষদের পক্ষ থেকে কম্বল, শুকনা খাবার ও দুই বস্তা চাল দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লামা ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে ৩৪টি কম্বল এবং শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও তাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদেরকে বলেছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে লিখিত আকারে দিতে।
“সেখানে বেনজীর আহমদের নামে কোনো জমির মালিকানা নেই। তবে যার নামেই থাকুক, জায়গা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে বলেছি।”
রূপায়ন দেব বলেন, “এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো-কোনো গ্রুপ থেকে চাঁদা আদায়ের কথাও বলছিল, সবকিছু মিলে তারা লিখিত আকারে অভিযোগ দিক। এখানে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার বা চাঁদা আদায়ের সুযোগ নেই।”
লামা থানার ওসি এনামূল হক ভূঞা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যেসব অভিযোগের কথা বলেছেন, সেগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।
বুধবার গভীর রাতে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওর্য়াডে নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা যখন বড়দিনের উৎসব পালন করতে বাড়ির বাইরে ছিলেন তখন আগুনে তাদের ১৭টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, বড়দিন উপলক্ষে বুধবার রাতে পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় অনুষ্ঠান চলছিল। বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা সবাই সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তখন আগুনে বেতছড়া পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে গেছে।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, পাড়ার সব ঘরবাড়ি বাঁশ ও শনের তৈরি। টংগ্যাঝিরি থেকে বেতছড়া পাড়ায় আসতে আধাঘণ্টার মত সময় লাগে। আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই এসে দেখে, ১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।