“আমার বয়স ষাটের কাছাকাছি। আজ পর্যন্ত কাউরে দেখি নাই যে, ভাঙন থামাতি আসেছে।”
Published : 09 Oct 2024, 11:08 AM
“আমার যাওয়ার জায়গা নাই। কোনে যাবো? কিডা বাড়ি করার জাগা দিবি। নিজের জাগা-জমিও নাই। আর ইকটু ভাঙলি আমার বাড়ি ভাঙে যাবি।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আছিয়া বেগম।
পদ্মার পানি বাড়ায় গত কয়েক দিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকায় ভাঙনে ফসলসহ কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ফসলসহ জমি হারাচ্ছেন পদ্মা পাড়ের অনেক কৃষক।
রাজবড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনের ভাঙনে ২০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে।
নদী ভাঙনে ভুক্তভোগীদের একজন আছিয়া বেগম। নদী ভাঙনে তার শেষ সম্বলটুকু চলে গেলে কি করবেন, এখন সে দুশ্চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে তার কপালে।
আছিয়া বলছিলেন, “বাবা নদী ভাঙনে এখন আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানের উপায় নাই। ছেলে পেলে যে কয়টা আছে তারাও ছোট ছোট। তারা খাবি কি? করবি কি? এই তো দশা। আমি বুড়ো মানুষ। এহন বাড়ি ভাঙলি কনে যাবো সেই চিন্তায় বাঁচিনে বাবা।”
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে ২০০ শত মিটারের বেশি এলাকার উচ্ছে, পটল, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত, ফসলি জমি ও চারটি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝঁকিতে রয়েছে স্কুল, কবরস্থান, শতাধিক বসতবাড়ি এবং আরও শত শত বিঘা ফসলি জমি। ভাঙ্ন রোধে এরই মধ্যে মানববন্ধনও করেছে গ্রামবাসী।
সোমবার সকালে মুন্সিবাজার এলাকা ঘুরে গেছে, ভাঙন আতঙ্কে এরই মধ্যে চার থেকে পাঁচটি বসত বাড়ি অন্য জায়গায় সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। ওইসব পরিবারের লোকজন কয়েকটি ঘরের চাল, বেড়া, আসবাবপত্র রাস্তার পাশে স্তুপ করে রেখেছেন।
মুন্সিপাড়া এলাকার নজরুল খান বলেন, “জন্মের পর থেকে নদী ভাঙন দেখতেছি। এখন আমার বয়স ষাটের কাছাকাছি। আজ পর্যন্ত কাউরে দেখি নাই যে, ভাঙন থামাতি আসেছে।
“আমাগে এমপি ছিল বাটপার। কোনো কাজই করে নাই। অথচ ভোটের সময় আসলি হ্যান করে দিবো, ত্যান করে দিবো কয়া বাটপারি করে ভোট নিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “আসরা রিলিপ, সিলিপ কিছুই চাইনে। আমাগো নদীডা শাসন চাই। কিডা করবি এই নদী শাসন?”
কুশাহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “ভাঙ্ন ঝঁকিতে রয়েছে আশপাশের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, মুন্সিপাড়া বাজারসহ শত শত বসত বাড়ি। এসব স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
চান্দু মোল্লা বলেন, “পদ্মায় পানি বাড়ায় তিন দিন ধরে ভাঙ্ন চললেও এখানেও কেউ আসে নাই। এরই মধ্যে কয়েকটি বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। বিভিন্ন আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষেতসহ জমি বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাবাসী মানববন্ধ করেছি। যেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে কাজ করে।”
আতর আলী শেখ বলেন, “এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানরা বিশ-ত্রিশ বছর ধরে আশ্বাসই দিয়ে আসছে যে, ক্ষমতায় হগেলে আমাগে নদী শাসন করে দিবি। কিন্তু কেউ দেয় নাই।
“আমরাদের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি নদীতি ভাঙছে। জাগায়-জমি যা ছিল, তা তো নদীর মদ্দি। এহন বাড়ি ভাঙলি কোনে যাবো তা কবের পারিনে বাপু। আমাগে এটাই চাওয়া এই নদীটা যেন সরকার শাসন করে দেয়।”
রাজবড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করব।”