“ভাড়া বাড়ানো হয়নি, বরং ২০-৫০ টাকা কমও নিচ্ছি,” বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিশা বাস কাউন্টারে থাকা শাহ আলম।
Published : 28 Mar 2025, 08:24 PM
একটি পোশাক কারখানার কর্মী আশিক চৌধুরী থাকেন নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে৷ ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে।
মদনপুর থেকে সাইনবোর্ড এসেছেন বাসের টিকেট কাটতে৷ তার দাবি, নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে ২০০ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে তাকে৷
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় আশিকের সঙ্গে৷ কারখানায় অর্ধবেলা কাজ শেষে ছুটি পেয়ে রওয়ানা হয়েছেন তিনি৷
আশিক বলেন, “হানিফ পরিবহনের দুটি টিকেট কিনেছি৷ রেগুলার ভাড়া ৬০০ টাকা হলেও ভাড়া নিছেন ৭০০ টাকা করে৷ আবার ১০০ টাকা ঈদ-বোনাস হিসেবেও চেয়ে নিয়েছেন কাউন্টারের লোকজন৷”
ভাড়া বেশি নিলেও তেমন ‘আক্ষেপ’ নেই জানিয়ে এ পোশাক কর্মী বলেন, “নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছাতে পারলেই হল৷”
তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই দাবি করে হানিফ পরিবহনের কাঁচপুর কাউন্টারের রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পরিবহনের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে৷ যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি হয়তো অন্য কারোর মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন৷”
এদিকে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করলেন শিমরাইল যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষায় থাকা কাজল ও আসমা বেগম নামে দুই নারী পোশাক শ্রমিকও৷
আসমা থাকেন নারায়ণগঞ্জের চৌধুরীগাঁও এলাকায়৷ যাবেন গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জে৷ নামবেন হাজীগঞ্জ শহরের পরের স্টপেজে৷ মা ও শিশু ছেলেকে গত শুক্রবারই পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ ছুটি পেয়ে আজ নিজে রওয়ানা হয়েছেন৷
আসমা বলেন, “আমার কাছ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নিছে৷ কিন্তু গত সপ্তাহে মাকে পাঠিয়েছি ২৮০ টাকা ভাড়ায়৷ ঈদে সবসময়ই বেশি ভাড়া দিতে হয়৷ সরকারও এডি থামাইতে পারে না৷”
যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে৷ যদিও অন্য ঈদের তুলনায় এবার যাত্রীর চাপ কম বলে দাবি করছেন পরিবহনগুলোর কাউন্টারে থাকা টিকেট বিক্রেতারা৷
তবে যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকায় বাসে প্রত্যাশিত আসন মিলছে না৷
কেননা রাজধানীর প্রধান কাউন্টারগুলো থেকেই লোকজন টিকেট কাটছেন বেশি৷ ফলে পরের কাউন্টারগুলোতে প্রত্যাশিত আসন পাচ্ছেন না৷ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ তাদের৷
যদিও অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন পরিবহনের সংশ্লিষ্টরা৷
তারা বলছেন, নিয়মিত ভাড়াই আদায় করছেন৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিশা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা শাহ আলম বলেন, “ভাড়া বাড়ানো হয়নি, বরং ২০ থেকে ৫০ টাকা কমও নিচ্ছি৷ কারণ, শুক্রবার যাত্রী পাওয়ার কথা, তেমন পাচ্ছি না৷ রাস্তায় গাড়ি বেশি কিন্তু যাত্রী কম৷ ঈদ উপলক্ষে অনেক পরিবহনের বাসই মহাসড়কে নামানো হয়েছে, যেগুলো নিয়মিত চলে না৷”
কোনো কোনো পরিবহন কাউন্টারের কর্মীরা আশানুরূপ যাত্রী না পাওয়ার দাবি করলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর এলাকার তিনটি বাস স্ট্যান্ডে চট্টগ্রাম ও সিলেট পথে যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে৷
সাইনবোর্ড এলাকায় মারশা ট্রান্সপোর্ড লিমিটেড নামে পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার এসএ মিজানুর রহমান বলেন, “গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঘরমুখো যাত্রী বেড়েছে৷ তবে, এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়াতে যাত্রীর চাপ খুব একটা নেই।”
“ছুটি বেশি থাকায় যে যার সুবিধা মত সময়ে রওয়ানা হইছে৷ অনেকেই পরিবারের কিছু সদস্য আগেই পাঠিয়ে দিছে৷ ট্রেনযাত্রা এবার সহজ হওয়ায় অনেকে ওইদিক দিয়া গেছে৷ তারপরও বাসে যাত্রী যা আছে তাও খারাপ না৷”
শিমরাইল এলাকায় নোয়াখালীর কোনো বাসে সিট না পাওয়ার কথা জানান জাফর হোসেন৷
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি তিনি৷ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা তার অন্য তিন সহকর্মীর বাড়িও নোয়াখালীতে৷
“লোকজনের প্রচুর ভিড়৷ বেশিরভাগ টিকেটই ঢাকা থেকে বেশি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে৷ এইখানে তিনটা পরিবহনে জিগাইলাম কয়, টিকেট নাই৷ অপেক্ষা করতেছি, দেখি পরের কোনো লাইনের টিকেট পাই কিনা,” বলছিলেন জাফর৷
এমন সময় তাদের এক সহকর্মী হন্তদন্ত হয়ে এসে জানান, চারটি টিকেট পাওয়া গেছে কিন্তু তাও একেবারে পেছনের আসনে৷ উপায়ন্ত না দেখে ওই বাসেই ওঠার প্রস্তুতিই নিচ্ছেন তারা৷
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে যাত্রী ও পরিবহনের চাপ থাকলেও দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দুটিতে তীব্র যানজট দেখা যায়নি৷
তবে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে থেমে থেমে চলছিল যানবাহনগুলো৷
এ মহাসড়কের কাঁচপুর, তারাব, রূপসী এলাকায় হাল্কা যানজট দেখা গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদী ছিল না৷ এ পয়েন্টগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও তৎপরতা দেখা গেছে৷ পাশাপাশি দেখা যায়, মহাসড়কে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় অনিয়মও৷
দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক দুটির লাগোয়া স্থায়ী কোনো টার্মিনাল না থাকায় সড়কের উপরেই এলোপাথারিভাবে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করতে দেখা গেছে৷
এছাড়া মহাসড়কে ছিল ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মত ধীরগতির যানবাহনের অবাধ চলাচল৷
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল হাইওয়ে ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হাইওয়ে পলিশের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন৷ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে তাদের তৎপরতা রয়েছে৷
এদিকে, মহাসড়কে যানজট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার দুপুরে সাইনবোর্ড, ভূঁইঘর ও শিবু মার্কেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
ফতুল্লার সহকারী কমিশনার (ভূমি), মো. আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে নদী পরিবহন, তিশা পরিবহন, আল মোবারক পরিবহনকে ২১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও তা আদায় করা হয়।
এরপর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে কারাদণ্ডসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।