কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই রংপুরে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
Published : 18 Aug 2024, 06:54 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় পুলিশের সাবেক আইজিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
রোববার সকালে রংপুর মহানগর হাকিমের তাজহাট আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী।
পরে আমলি আদালত তাজহাটের বিচারক রাজু আহমেদ মামলাটি আমলে নিয়ে তাজহাট থানাকে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী রায়হানুজ্জামান।
মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- সাবেক আইজি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান, এএসআই আমীর আলী, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী কমিশনার আল ইমরান হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল কর্মকর্তা রাফিউল হাসান, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান এবং লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মণ্ডল।
আরও পড়ুন:
আবু সাঈদ হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেল পিবিআই
বিজয়ের সুফল ভোগ করবে দেশের মানুষ: ইউনূস
এ ছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় রায়, দফতর সম্পাদক বাবুল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতিভূষণ রায় এবং তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৬ জুলাই দুপুর পৌনে ২টার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটের কাছে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন ও অন্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফ হোসেন ও আল ইমরানের নেতৃত্বে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
পরে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফ এবং আল ইমরানের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আবু সাঈদকে হত্যার উদ্দেশে বেধড়ক পেটায়। উপস্থিত কয়েকজন সংবাদকর্মী সেই দৃশ্য ধারণ করতে শুরু করলে পুলিশ সদস্যরা আবু সাঈদকে ফেলে চলে যান।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নেতা পোমেল বড়ুয়ার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আবু সাঈদ পিছু না হটে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে সামনে এগিয়ে যান। এ সময় ৫০ থেকে ৬০ ফুট দূরে ছিল পুলিশ।
আরও পড়ুন:
কোটা: আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় ২ পুলিশ বরখাস্ত
ঘটনার একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান হেলমেট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে ‘গুলি করুন, গুলি করুন’ বলে জোরে জোরে বলতে থাকেন। আর অপর দুই শিক্ষক মশিউর রহমান এবং আসাদুজ্জামান মণ্ডল পুলিশকে বারবার গুলি করতে বলেন।
একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও এএসআই আমীর আলীসহ অন্যরা আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলি খেয়ে আবু সাঈদ পড়ে গেলে, সহপাঠীরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এ সময় সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান শটগান দিয়ে গুলি করতে থাকেন। পরে সাঈদকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আইনজীবী রায়হানুজ্জামান জানান, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, “আমরা বেশ কিছু দিন ধরে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় মামলা করা হয়নি।”
এর আগে ১৭ জুলাই আবু সাইদ নিহতের ঘটনায় তাজহাট থানার উপ-পরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় দুই থেকে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়।
নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
আরও পড়ুন:
কোটা: 'ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে', সাঈদের বোনের আহাজারি