দ্বীপের পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রাণ-আরএফএল এবং ইউএনডিপি এই কর্মসূচিটি গ্রহণ করেছে।
Published : 09 Dec 2024, 07:33 PM
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যা হয়েছে, হয়েছে; এখন আর নতুন করে পরিবেশবিরোধী কিছু করতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সোলায়মান হায়দার।
তিনি বলেছেন, “দ্বীপের প্রকৃতি ও পরিবেশ দেখতেই পর্যটকরা ভ্রমণে আসেন। আর এসেই সেই প্রকৃতি ও পরিবেশ ধংস করবেন; তা হতে দেওয়া যাবে না।”
সোমবার দুপুরে কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিনে আয়োজিত “সেন্টমার্টিন: পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতি” শীর্ষক এক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্বীপের পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রাণ-আরএফএল এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এই কর্মসূচিটি গ্রহণ করেছে।
এই কর্মসূচির উদ্বোধনকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “পরিবেশ রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন উদ্যোগে এগিয়ে এলে সেন্ট মার্টিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।”
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া হবে একাধিক উদ্যোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিং, দ্বীপে উৎপন্ন প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করে তা রিসাইক্লিংয়ের জন্য প্রসেসিং প্ল্যান্টে পাঠানো হবে।
এ ছাড়া দ্বীপে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং পদ্ধতি চালু করা হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্বীপজুড়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হবে। স্থানীয় জেলেদের সংগৃহীত সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিটেইল চেইন শপে ‘সেন্ট মার্টিন এক্সক্লুসিভ’ নামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন প্রচার চালানো হবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, “পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। এবার ইউএনডিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের অর্থনীতি ও পরিবেশ দুটোকেই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।”
পরিবেশ দূষণ রোধে বিচ ক্লিনিং কার্যক্রম
উদ্বোধনী দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ছিল ‘বিচ ক্লিনিং’ কার্যক্রম। সোমবার সকাল থেকেই প্রাণ-আরএফএল এবং মাই সেন্ট মার্টিনের সহযোগিতায় স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সৈকত পরিষ্কারের কাজে অংশ নেন।
জাহাজ ঘাট থেকে দ্বীপের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত সৈকতে পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়।
বিচ ক্লিনিং কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, “পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে সৈকত প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমাদের স্থানীয়দেরও সচেতন হওয়া দরকার।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সোলায়মান হায়দার বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ধরনের কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি।”
ইউএনডিপির হেড অব এক্সপেরিমেন্টেশন রমিজ উদ্দিন বলেন, “সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের অংশীদারত্বমূলক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণ-আরএফএল যুক্ত হওয়ায় আমাদের কাজের গতি বেড়েছে।”
এই উদ্যোগ দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব কর্পোরেট ব্র্যান্ড নুরুল আফসার, হেড অব সাসটেইনেবিলিটি সুমাইয়া তাবাস্সুম আহমেদ, ইউএনডিপির ডেটা অ্যানালিটিকস কর্মকর্তা আহমেদ উল্লাহ কবিরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।