অপহরণের তিনদিন পর শিশুটির অর্ধগলিত লাশ বাসার পাশের কলা বাগানের ভেতরের একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
Published : 13 Jul 2024, 10:56 PM
ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই মুক্তিপণের দাবিতে গাজীপুরে এক ব্যবসায়ীর শিশু সন্তানকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি র্যাবের। যদিও পরে শিশুটিকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় যৌথ অভিযান চালিয়ে দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যারা ওই শিশুটির বাবার মালিকানাধীন প্লাস্টিকের ববিন কাটার গুদামে কাজ করতেন বলে র্যাব জানায়।
শনিবার র্যাব ১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও পরিচালক (মিডিয়া) মাহফুজুর রহমান এসব জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পাউরিতলা গ্রামের মৃত মজনু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২০) এবং তার সহযোগী ফুলপুর উপজেলার কুশকান্দা গ্রামের ইস্কান্দার মিয়ার ছেলে ও হত্যার শিকার শিশুটির চাচাতো ভাই সাগর মিয়া (২২)।
নিহতের স্বজনরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার আমবাগ এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নাজমুল হোসেন।
ওই এলাকায় প্লাস্টিকের ববিন কাটার গোডাউন রয়েছে নাজমুলের।
তার শিশু সন্তান সানজিদুল ইসলাম তামিম (৬) স্থানীয় আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। গত ৭ জুলাই বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় তামিম।
স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
শিশুটি নিখোঁজের পরদিন একটি মোবাইল নম্বর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে তামিমকে অপহরণের কথা জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন নাজমুলের কাছে।
পরে অপহরণকারীর দেওয়া তথ্যে স্বজনরা টাকা নিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে যান। কিন্তু অপহরণকারীর মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পেয়ে ফিরে আসেন শিশুটির স্বজনরা।
এদিকে, অপহরণে তিনদিন পর শিশুটির অর্ধগলিত লাশ বাসার পাশের কলা গাছের ঝোপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত হাসান ও সাগরকে যৌথ অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কদুরবাড়ী বাজার এবং ফুলপুর উপজেলার কুশকান্দা এলাকা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা শিশু তামিমকে মুক্তিপণের দাবি অপহরণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে।”
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে হাসান ও সাগর জানান, নিজেরা ঋণমুক্ত ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তামিমকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।
গত ৭ জুলাই সন্ধ্যায় হাতি দেখানোর কথা বলে তামিমকে তার বাবার ববিন কাটার গুদামের সামনে থেকে অপহরণ করে হাসানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে বাসার শৌচাগারে আটকে রেখে মুক্তিপণের বিষয়ে দুজন পরামর্শ করেন।
তবে তারা শঙ্কা করেন যে, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় টাকা আদায় করে তামিমকে মুক্তি দিলে সে তার পরিবারকে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে দেবে। সেই ভয় থেকেই ওইদিন রাত ৮টার দিকে শৌচাগারের ভেতর সাগর তার চাচাতো ভাই তামিমের পা চেপে ধরেন এবং হাসান গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ কলাবাগানের ঝোপে ফেলে রাখেন।
র্যাব আরও জানায়, পরদিন ৮ জুলাই সকালে হাসান একটি নম্বর থেকে নাজমুল হোসেনকে জানান, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দিলে তামিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
অপহরণকারীদের দাবির টাকা নিয়ে তাদের দেওয়া ঠিকানা মত ময়মনসিংহের বাইপাস এলাকায় যান তামিমের স্বজনরা।
কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান অপহরণকারীরা।
আরও পড়ুন:
গাজীপুরে নিখোঁজের ৩ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার