“আমরা আমাদের অধিকার, স্বীকৃতি নিয়ে এই বাংলাদেশেই থাকতে চাই। এই ন্যায্য অধিকারের অস্বীকৃতি সত্যিই দুঃখজনক।”
Published : 09 Apr 2025, 06:14 PM
পাহাড়ি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণের আয়োজনে রঙিন হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। জেলার পাড়া-মহল্লায় বইছে উৎসবের আমেজ।
এ উৎসবের অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি।
এর আগে সকালে বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, সাংলান, চাংক্রান, পাতা- ২০২৫ উদযাপন কমিটির আয়োজনে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। পরিবেশিত হয় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়াসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য।
পরে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচানা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
তিনি বলেন, “দেশের সংস্কারে যে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে আমি অন্তত তিনটি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি, সংলাপ করেছি। সেসব কমিশনে আমরা যেভাবে আমাদের স্বকীয়তার কথা, বাংলাদেশের বহুত্ববাদের কথা প্রতিফলিত হবে বলে আশা করেছিলাম… তা আমাদের নিরাশ করেছে।”
রাজা আরও বলেন, “আমাদের যদি স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সংবিধানের স্বীকৃতি হয়- তাহলে এই অধিকার, স্বীকৃতি, মান-মর্যাদা তো আমরা দেশের বাইরে বার্মা, ভারতে নিয়ে যাব না।
“আমরা আমাদের অধিকার, স্বীকৃতি নিয়ে এই বাংলাদেশেই থাকতে চাই। এই ন্যায্য অধিকারের অস্বীকৃতি সত্যিই দুঃখজনক।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
তিনি বলেন, “আদিবাসী জুম্মজনগণ তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় তাহলে বাংলাদেশের আপামর জনগণের সেখানে মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ আমরা দেখি না। বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষ রয়েছে তাদের এই পার্বত্য অঞ্চল তথা সমতলে আদিবাসীদের নিয়ে নতুন করে ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। “
বাংলা নববর্ষকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী নিজ-নিজ প্রথা-সংস্কৃতি মেনে উদ্যাপন করেন। এরমধ্যে চাকমাদের উৎসব হচ্ছে বিঝু, মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু, অহমিয়াদের বিহু, খুমীদের সাংক্রাই, ম্রোদের চাংক্রান, খিয়াংদের সাংলান, সাঁওতালদের পাতা।
নববর্ষ উদযাপন নিয়ে ঊষাতন তালুকদার বলেন, “এই শুভ দিনে আমরা যেন সকলে মন খুলে নেচে-গেয়ে বিঝু, বৈসু, সাংগ্রাই উদযাপন করতে পারি এই প্রত্যাশা করছি। ”
আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মণি তালুকদার।
আলোচনা সভা শেষে পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়।
র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।