চাষিরা বলছেন, পাতা মারা প্রতিরোধে তারা ছত্রাকনাশক স্প্রে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
Published : 17 Feb 2025, 09:34 AM
মুড়িকাটা পেঁয়াজের পর এখন হালি পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত রাজবাড়ীর চাষিরা। তবে ক্ষেতে ‘পার্পল ব্লচ’ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় মরে যাচ্ছে পেঁয়াজের পাতা। তাই ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
সেসঙ্গে বাজারে নতুন পেঁয়াজের দাম বা সরকারের পেঁয়াজ আমদানি করা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তারা ।
আর কৃষি বিভাগ বলছে, পেঁয়াজের ‘পার্পল ব্লচ’ রোগ প্রতিরোধে চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে রোগের বিস্তার কমে যাবে।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে চাষিরা পেঁয়াজ ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ ব্যস্ত নিরানীতে। কেউবা জমিতে সার, কীটনাশক ছিটাচ্ছেন।
এর মধ্যেই কথা হয় কালুখালি উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষি সামাদ সরদারের সঙ্গে।
ক্ষেত পরিচর্যার ফাঁকে তিনি বলেন, “ইবার পিজ ভালো হচ্ছে না। শীত কমে যাওয়ায় পিজির গাছের মাথা মরে যাচ্ছে। মরা ঠেকাতে বাজার থেকে ওষুধ কিনে স্প্রে করছি। দেহি কী হয়। তবে ইবার মনে হচ্ছে ভালো ফলন পাবো না।”
পাংশা উপজেলার কসবামাঝাইল ইউনিয়নের নাদুরিয়া এলাকার চাষি সাল্লেক ফকির বলেন, “পিজির পাতা মরে যাচ্চে। আরবছর (গতবছর) পাতা মরার জন্নি যে বিষ (ওষুধ) দিচলাম ইবার সেই বিষ বাজারে পাচ্চিনে। ওই বিষ দিউয়ার পর পিজি উপকার পাইছিলাম। কিন্তু ইবার যে বিষ দিচ্চি তাতে কাম হচ্চে না। শ্যাষ পর্যন্ত দেহি কি হয়।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে পেঁয়াজ ক্ষেতে এই ‘পার্পল ব্লচ’ রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগের কারণে পেঁয়াজ গাছের পাতা মরে যাচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিরা জানান, একধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। এই রোগে যে কোনো বয়সের পাতা ও কাণ্ডে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা তামাটে, বাদামি বা হালকা বেগুনি রংয়ের দাগের সৃষ্টি হয়।
দাগগুলি বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয় এবং আক্রান্ত স্থান খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা ক্রমান্বয়ে উপরের দিক থেকে মরতে শুরু করে। পাতা বা কাণ্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানে দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ ভেঙে পড়ে।
এতে বীজ অপুষ্ট হয় ও ফলন কম হয়। বীজ বেশিদিন গুদামে রাখা যায় না। বাজার মূল্য কমে যায়।
চাষিরা বলছেন, পাতা মারা প্রতিরোধে তারা ছত্রাকনাশক স্প্রে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
আরেক চাষি মোস্তফা খান বলেন, “আবহাওয়া খারাপের জন্নি পিজির ফলন ভালো হবি নানে। তারপরও যদি দাম থাহে তালি কৃষক বাঁচপি। সরকার যদি বাইরে থেকে পিজ না আনে তালি কৃষক কিছু টাকা পাবি। আর বাইরের পিজ আনলি লস যাবি।”
মোস্তফা খান আরও বলেন, কৃষককে বাঁচাবার চালি সার, ওষুধের দাম কমাতি হবে। এহন যে বাজার আছে এই দামে বিক্রি করলিও কৃষকের লোকসান যাবি। যদি মণ ২ হাজার টাকার ওপরে বেচা যায় তালি আর লোকসান হবি নানে। ইবারতো পিজি মেলা খরচ বাপু।”
পাংশা উপজেলার কসবামাঝাইল ইউনিয়নের নাদুরিয়া এলাকার চাষি হালিম বিশ্বাস বলেন, “ধরেন দেড় দুই মাস পর পিয়াজ উঠাবো। কয়দিন আগে সার দিচি, পানি দিচি। এহন কুপাচ্চি। ইবার বিগেয় (বিঘা) ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ পড়তেছে। আর যারে লিজের ভূই (জমি) তারে খরচ হবি ৪০-৪৫ হাজার।
“ফলন ভালো হলি বিগেয় পিয়াজ হবি ৫০-৫৫ মণ। পিজির অবস্তা ভালো পাচ্চিনে, কি হবিনি বলবের পারিনে। উটোনের সুময় সরকার বাইরের পিয়াজ আনলি কৃষকের মাঠে মারা। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমরা যহন পিয়াজ তুলি, তহন যেন পিয়াজ না আনে।”
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ ভাগ উৎপাদন হয় রাজবাড়ী জেলায়। এবছর জেলায় ৩৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।
“এর মধ্যে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা, ৩১ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে হালি ও ১৪২ হেক্টর জমিতে কদম বা দানা পেঁয়াজ রয়েছে। এ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
শহিদুল আরও বলেন, এ বছর কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদে একটু দেরি হলেও বেশ যত্ন সহকারে করছেন। কিছু কিছু জায়গায় পেঁয়াজের প্রধান রোগ পার্পল ব্লচ দেখা দিয়েছে।
“কৃষকেরা রোগ দমনে বেশ তৎপর রয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারাও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করছে। আশা করি এই রোগ মাঠে থাকবে না। ”