তবে যানজটসহ যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ।
Published : 25 Mar 2025, 08:59 AM
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের ৪৫ কিলোমিটার পার্শ্বরাস্তার যানবাহন ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবহন শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ছাড়া ঈদে যানবাহন চলাচলে তেমন বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন রাস্তায় যানবাহনের গতিবিধি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
তবে এ মহাসড়কে রাতে ডাকাতির আতঙ্ক আছে বলে পরিবহন চালকরা জানান।
যদিও যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ।
যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে থাকে।
এসব যানবাহন সেতু অতিক্রম করার পর হাটিকুমরুল গোলচত্বরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
পাবনা ও রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম থাকলেও অধিকাংশ চাপ পড়ে বগুড়ামুখি মহাসড়কে।
এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ প্রায় শেষের পথে।
ঈদযাত্রায় মহাসড়কের ভোগান্তি এড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সাসেক-২ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঈদযাত্রা নিবিঘ্ন করতে ঝাঐল ওভারপাস খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে সলঙ্গা, ঘুড়কা, সোনকা ও মির্জাপুরের আন্ডারপাস।
“এ ছাড়া ঢাকা থেকে বগুড়াগামী যানবাহনগুলোর সুবিধার্থে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে চারটি পার্শ্ব রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
“আশা করছি, ঈদযাত্রায় যানবাহনগুলো নিরাপদে চলতে পারবে।”
এ পথে চলাচল করা বাসের চালক সুরুজ্জামান বলেন, “এবার মহাসড়ক অনেক ভালো আছে। তবে তিন চাকার যানবাহনসহ অবৈধ যানবাহন ভোগান্তির কারণ হতে পারে। এদের কারণেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে এবং দ্রুতগামী বাসের গতি কমে যায়।
“এ ছাড়া পার্শ্বরাস্তা থেকে আসা যানবাহনগুলো মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় যানজট লেগে যায়। এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি থাকতে হবে।”
আরেক বাসচালক সোহরাব আলী বলেন, “রাতের বেলায় মহাসড়কে যানবাহনে ঢিল দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ও রাস্তায় তারকাঁটা ফেলে চাকা পাংচার করে ডাকাতি হয়ে থাকে। যা ঈদযাত্রায় আরো বেড়ে যেতে পারে। এজন্য পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।”
যমুনা সেতুর পশ্চিম থানার ওসি আনারুল ইসলাম বলেন, “মহাসড়কের নিরাপত্তায় সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে নলকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকায় থানার ৬০ জন পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০-৮৫ জন সদস্য দিনে ও রাতে দায়িত্ব পালন করবে।
“দুই কিলোমিটার পরপর পুলিশের কড়া অবস্থান থাকবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল টিমও মহাসড়কে টহল দেবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
২৬ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ডাকাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্জন-ফাঁকা ও অন্ধকার জায়গা টার্গেট করে ডাকাতরা অপরাধ করে থাকে। এক্ষেত্রে বডিতে ঢিলের শব্দ শুনলেই রাস্তায় গাড়ি থামানো যাবে না।”
যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত পুলিশের সহায়তা নেওয়ার জন্য চালকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, “নলকা থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় ১৬টি স্থানকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব স্থানে হাইওয়ে পুলিশের টিম ২৪ ঘণ্টা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেলের টহল অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া যানজট এড়াতে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে বগুড়ামুখি রাস্তায় বাঁশ দিয়ে চারটি লেন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।”
মহাসড়কের নিরাপত্তায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ৫০ জন এপিপিএন সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য যুক্ত হবেন বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
রায়গঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “মহাসড়কের চান্দাইকোনা থেকে সিরাজগঞ্জের সীমান্তবর্তী বগুড়ার শেরপুর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান করবে। এজন্য থানার ৩০ জনের পাশাপাশি পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত আরো অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য যুক্ত হবেন।”
এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত হবে বলে আশ্বস্ত করলেন তিনি।
সিরাজগঞ্জের এসপি ফারুক হোসেন বলেন, “২৬ মার্চ থেকে ৬০০ পুলিশ সদস্য পোশাক এবং পোশাক ছাড়া কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেবে।
“মোবাইল টিমের পাশাপাশি থাকবে মোটরসাইকেলের টহল।”
বেশকিছু স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে ড্রোন ক্যামেরাও ব্যবহার করা হবে।”
ফারুক হোসেন আরো বলেন, “অনুমোদনবিহীন যানবাহনগুলোকে কোনোক্রমে মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না। ফিডার রোডগুলোর (পার্শ্বরাস্তা) যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রবেশপথে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।”
তিনি বলেন, “আশা করছি, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের পাশাপাশি মহাসড়কের চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধ করা সম্ভব হবে।”
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের এসপি (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. শহিদ উল্লাহ্ বলেন, “ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের তিনটি মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য পোশাক এবং সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন। থাকবে মোবাইল ও মোটরসাইকেলের টহল টিম।
“অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরায় দিনে ও রাতে মহাসড়কের সবকিছু মনিটরিং করা হবে।
“এ ছাড়া ঈদযাত্রায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে মহাসড়কের ১৮টি পয়েন্টে গোপন সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে।”
হাটিকুমরুল গোলচত্বরে স্থাপিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে সব কিছু মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।
ঈদযাত্রার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি রেকার ও দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে।”
এদিকে, যমুনা সেতুর প্রস্তুতি সম্পর্কে সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, “সাধারণত প্রতিদিন যমুনা সেতু দিয়ে গড়ে ২০ থেকে ২১ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদযাত্রায় তা বেড়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে নয়টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে।”