আওয়ামী লীগে যোগদানের গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গাঁ বলেন, “এটা সময়ই বলে দেবে।”
Published : 01 Aug 2023, 03:39 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে পুরো রংপুর শহরে এখন সাজসাজ রব। দলের নেতাকর্মীরা জমায়েত ও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা, নৌকা আর তোরণে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা নগরী। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গানের সুরে নগরীতে চালানো হচ্ছে প্রচার।
কর্মীদের মধ্যে চলছে উৎসব-উৎসব ভাব। তাদের বিশ্বাস, বুধবার প্রধানমন্ত্রী রংপুরের উন্নয়নে বিশেষ ঘোষণা দেবেন।
এর মধ্যে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে নগরীতে পোস্টার সাঁটিয়েছেন; যা সবার নজর কেড়েছে।
আর এ নিয়েই রংপুরজুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন। লোকমুখে সেই কথা ভেসে বেড়ালেও বাস্তবে এ নিয়ে জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের কেউ মুখ খুলছেন না।
দলের অনেকে মনে করছেন, এই গুঞ্জনের মূলে রয়েছে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে রাঙ্গাঁর বিরূপ সম্পর্ক। যদিও রওশন এরশাদের সঙ্গে রাঙ্গাঁর সম্পর্ক ভালো।
রাঙ্গাঁ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে যে পোস্টার ছেপেছেন, তাতে তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। আর পোস্টারে তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও দিয়েছেন। নিজের ছবি দিয়েছেন পোস্টারের নিচে।
রাঙ্গার পোস্টারে লেখা রয়েছে, “অবহেলিত রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনকে মডেল ও আধুনিক আসনে রূপান্তরিত করতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় রংপুরের পুত্রবধূ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রংপুর-১ আসনবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”
রংপুরের সাংবাদিকদের রাঙ্গাঁ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন তিনি রংপুরে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের যোগদানের গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গাঁ বলেন, “এটা সময়ই বলে দেবে।”
বুধবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে সেখানে বিশাল নৌকা-সদৃশ্য মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি দল এরই মধ্যে রংপুরে পৌঁছে জেলা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের তদারকি করছেন।
নগরীতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান ও টহল দেওয়া শুরু করেছে।
নগরীর জিলা স্কুল মাঠ থেকে শুরু করে ক্যান্টনম্যান্ট চেকপোস্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে রাঙ্গাঁর ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে। এই পোস্টার-ফেস্টুন নিয়ে নগরীতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ বলাবলি করছে, এমপি রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন। এ কারণেই নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার লাগানো হইছে। উনার সঙ্গে তো জাতীয় পার্টির সম্পর্ক ভালো না।”
অটোরিকশার চালক আমিনুর রহমান বলেন, “উনার এলাকার (গঙ্গাচড়া) লোকজন মনে করছে, উনি হয়তো আগামীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন; এইটা তার প্রাথমিক পদক্ষেপ।”
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন দলে তার কোনো পদ নেই। তবে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্বে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পুত্রবধূ। তাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার-ফেস্টুন দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টা আমি অন্যভাবে নিতে রাজি না। এটা উনি করতেই পারেন।”
মহানগর জাতীয় পাটির সভাপতি এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “তিনি (রাঙ্গাঁ) বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার লাগাতেই পারেন।”
এর বাইরে অন্য কোনোকিছু নিয়ে কথা বলতে চাননি মেয়র।
অপরদিকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো পদাধিকারী নেতাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসব বিষয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে তো দল থেকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ আছি। পোস্টারে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ছবি দিইনি, কারণ দল থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলে থাকলে তাদের ছবিও দিতাম।”
এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গাঁ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী এলাকা রংপুর-১ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখান থেকে মঙ্গা চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গঙ্গাচড়াবাসী অনেক কৃতজ্ঞ। সে কারণে তাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার লাগিয়েছি,” যোগ করেন রাঙ্গা।
আরও পড়ুন: