“আওয়ামী লীগের দোসররা আনসারদের একটা অংশ নৈরাজ্য তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে।”
Published : 26 Aug 2024, 09:48 AM
চাকরি জাতীয়করণসহ আনসার সদস্যদের বিভিন্ন দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জোহা চত্বরে জড়ো হয়।
এ সময় ‘এইট পাশ আনসার, গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কই পাস’, ‘আনসারের চামড়া তুলে নিবো আমরা', ‘আনসারের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’- স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রোববার রাত ৯টার দিকে সচিবালয়ের সামনে কয়েক দফা ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আনসার ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। আনসাররা বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে আটকে মারধর করেন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আরও শিক্ষার্থী এসে ধাওয়া দিলে আনসাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে সচিবালয় থেকে সরে যায়। এ সময় সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আনসারদের মারধরে আহত হন অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী-সাংবাদিক। সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও (২৫) আহত হয়েছেন।
পরে হাসনাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি আরও দুইজন হলেন- আব্দুর রহমান (৩০) ও আব্দুল কাদের (২৪)।
বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, “গত ১৬ বছরের ধরে শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট কাঠামো তৈরি করেছিল। এমনকি এ কাঠামোকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বলয়ও তৈরি করেছে। যা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কার করতে নিঃসন্দেহে সময় লাগবে। তাছাড়া দেশে নানা সঙ্কট বিদ্যমান।”
চলমান বন্যা পরিস্থিতির প্রসেঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সম্প্রতি ভারতের সৃষ্টি করা আকস্মিক বন্যাতেও পরিস্থিতি জটিল। এমন সময় আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগের দোসররা আনসারদের একটা অংশ নৈরাজ্য তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। পাশাপাশি সচিবালয়ও ঘেরাও করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই ও এ ঘটনায় দ্রুত বিচার দাবি করছি।”
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার মাঠে নামে আনসার সদস্যরা।
তারা দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে রাজি নন; চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সেদিন থেকেই প্রতিদিন তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন।
এর অংশ হিসেবে রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেইট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।
ওই বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“একই সাথে অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি কমিটি করা হবে৷ এই কমিটি সব কিছু পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে৷ সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব৷”
সচিবালয়ের এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও তাতে আশ্বস্ত না হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন আনসার সদস্যরা। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, অফিস শেষের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখান থেকে বের হতে পারেননি।
এই অবস্থায় রাত পৌনে ৮টার দিকে সচিবালয়ে পাঁচ জন উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আনসার বাহিনীর ১০ জন প্রতিনিধিও সেখানে যোগ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার এ বৈঠক শুরু হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াও সেখানে ছিলেন।
ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই রাত পৌনে ১০টার দিকে সচিবালয়ের বাইরে সংঘর্ষ শুরু হয়।