“মুছে দেওয়া একটি গ্রাফিতির কথা বলতে গিয়ে নৃশংসভাবে হামলার শিকার হতে হয়। এটাও এক ধরনের ফ্যাসিবাদ।”
Published : 16 Jan 2025, 09:24 PM
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে শহরে রাজবাড়ি মাঠ থেকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে এই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি শহরে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এসে জেলা প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি উলিসিং মারমা বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে গ্রাফিতির ‘আদিবাসী’ শব্দ মুছে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যে মার খেল তার জন্য প্রশাসনের লোকজনই দায়ী।
“আদিবাসী পরিচয় দাবি করলে একটি মহল সবসময়র ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। সবার মনে ভয় লাগিয়ে দেয়। এটা নিয়ে এত ভয় পাওয়ার নেই। একমাত্র উগ্র-জাতীয়তাবাদীরা এটা নিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করে।”
শিক্ষার্থী হ্লামংচিং মারমা বলেন, “যে কোনো জাতিসত্তার মানুষ যে পরিচয়ে স্বীকৃতি পেতে চায় সেটা তার অধিকার রয়েছে। আদিবাসী পরিচয় স্বীকৃতির দাবি এখনো পর্যন্ত কোনো সরকার আমলে নেয়নি।
“গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারও আদিবাসীদের বিপক্ষে যাওয়া শুরু করেছে। মুছে দেওয়া একটি গ্রাফিতির কথা বলতে গিয়ে নৃশংসভাবে হামলার শিকার হতে হয়। এটাও এক ধরনের ফ্যাসিবাদ।”
আরেক শিক্ষার্থী লাবনী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “পাহাড়ের যে কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলে সবসময় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
“মানুষ হিসেবে আমাদের নিজেদের কথা বলার অধিকার আছে। দাবি জানানোর অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশে নিজেদের কথা বলার জন্য কেন রক্ত ঝরতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “'গণ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদীকে বিতাড়িত করা হয়েছে। ভাবা হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার সবার কথা শুনবে। কিন্তু এই সরকারও সেই আগের সরকারের মত স্বৈরাচারী পথে হাঁটছে।”
পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে সেই গ্রাফিতি আবার পুনর্বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উহ্লাচিং মারমা, নিরন্তর তঞ্চঙ্গ্যা, জেমস বম ও চংয়ুং ম্রো।
এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ মারমা নিনি, অধিকার কর্মী লেলুং খুমী, জন ত্রিপুরা এবং জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা।
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এছাড়া রুমা, থানচি ও চিম্বুক পাহাড়ে ১৬ মাইল এলাকায়ও শিক্ষার্থীরা ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী সংবলিত’ গ্রাফিতি পুনর্বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।