জুলকারনাইন ২১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বিএনপি নেতা জি কে গউছ ও তার ভাইদের জড়িয়ে দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে একটি পোস্টটি দেন।
Published : 11 Jan 2025, 10:43 PM
দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেগুলো অস্বীকার করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ।
হবিগঞ্জের এই বিএনপি নেতা শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে তাকে জড়িয়ে ফেইসবুকে দেওয়া এসব অভিযোগের পোস্ট মুছে দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরকে (সামি) ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
হবিগঞ্জ পৌরসভার তিনবারের সাবেক মেয়র গউছ বলেন, এসব তথ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ‘ব্ল্যাকমেইলিংয়ের উদ্দেশে কারো কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে’ তাকে অপমান-অপদস্থ করার জন্য এসব মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
এ সংবাদ সম্মেলনের পর জুলকারনাইন নিজের ফেইসবুকে গউছকে নিয়ে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি একটি আইনি নোটিস যুক্ত করেছেন।
লিখেছেন, “এমন আরো অনেক কাহিনী আছে, যা একটা একটা করে সামনে আসবে। আর আপনি মিস্টার গউছ একটা একটা করে সংবাদ সম্মেলন করে বলবেন, এসবই ষড়যন্ত্র, আপনি একেবারেই সাধু-সন্ন্যাসী লেভেলের মানুষ। ওকা?”
দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরে প্রবাসী অ্যাক্টিাভিস্ট জুলকারনাইন গত ২১ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে জি কে গউছ ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে এই পোস্ট দেন।
তিনি একটি ‘বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাতে’ জি কে গউছ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মোট আটটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে- দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও মামলা দিয়ে হয়রানি (যার মধ্যে নিজের দলের নেতাও রয়েছেন) এবং মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং টাকার বিনিময়ে মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই হবিগঞ্জ শহরের জালালাবাদ অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণের কাজ জি কে গউছের ভাই জি কে গাফফারকে দেওয়া এবং হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আইসিইউ ভবন নির্মাণের জন্য ২০ কোটি টাকার কাজ জি কে গউছের পছন্দের কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ড এই বিএনপি নেতার অনুসারীদের দখলের অভিযোগও করা হয়। পরে সেগুলো অর্থের বিনিময়ে অন্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গউছ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতিটি অভিযোগ অবস্বীকার করে জবাব দেন।
বিনা দরপত্রে কাজ পাওয়া এবং হাসপাতালের আইসিইউ ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (পাউবো ও গণপূর্ত) প্রকৌশলীদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাঁধ মেরামতের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
তিনি বলেন, আর হাসপাতালের আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজের দরপত্র ২০২৩ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের সময়েই হয়েছিল। এ প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় এক কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অথচ জুলকারনাইন সায়ের বলেছেন, ২০ কোটি টাকা এবং বেড স্থাপনের পরিবর্তে ভবন নির্মাণের কথা বলেছেন।
জি কে গউছ বলেন, “তিনি (জুলকারনাইন) সম্পূর্ণ ব্ল্যাক মেইলিং করার উদ্দেশে অথবা অন্যের দ্বারা আর্থিকভাবে উপকৃত হয়ে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য এবং আমাকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত ও হেয়-প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে।
“রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আমাকে অপমান-অপদস্ত করার জন্য একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মারাত্মক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম, হবিগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল হাই, বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা রফিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী এনামুল হক, মিজানুর রহমান চৌধুরী।