বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
Published : 04 Jul 2024, 10:30 PM
ফেনীতে উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙা স্থান দিয়ে হু-হু করে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। এতে ফুলগাজী ও পরশুরামে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
সরকারি হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দুই উপজেলার সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর, ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। নষ্ট হচ্ছে বীজতলা ও সবজি।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে বাঁধের ৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১১টি স্থানে ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীতে আটটি, সিলোনিয়া নদীতে দুটি ও কহুয়া নদীর একটি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, মুহুরী নদীর পানিতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আছে মুন্সিরহাটে ২০টি, দরবারপুরে পাঁচটি, ফুলগাজীতে চারটি, আমজাদহাটে দুইটি, আনন্দপুরের দুইটি গ্রাম।
বিশেষ করে মুন্সিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তাড়ালিয়া গ্রামে সিলোনিয়া নদী রক্ষা বাঁধের একটি অংশে ভাঙন হওয়ায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এ উপজেলায় পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১ হাজার ৪০০।
তবে গত কয়েকদিনে উজানের পানিবন্দি গ্রামগুলোর পানি নেমে যাওয়ায় এ উপজেলায় মোট পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোয় ২৫ টন চাল উপ-বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর পানি এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের (চিথলিয়া তিনটি, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের পাঁচটি, মির্জানগর ইউনিয়নের দুইটি) প্রায় ১০ গ্রাম এবং পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাউরখুমা এলাকা প্লাবিত করেছে। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
পানি নামতে শুরু করলেও বৃষ্টি হলে আবারও বাড়ার শঙ্কা আছে।
এ উপজেলায় শুকনো খাবার বিতরণ হয়েছে ৭৫০ প্যাকেট। মজুদ আছে ১ হাজার প্যাকেট। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নসমূহ ও পৌরসভার অনুকূলে ২০ টন চাল উপ-বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্ষোভ বন্যাকবলিতদের
এদিকে কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন কিছু এলাকার বন্যা দুর্গতরা।
ফুলগাজীর করইয়া গ্রামের ছেমনা খাতুন বলেন, “গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি, কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য-সহায়তা দেয়নি। গরিবের খবর কেউ রাখে না।”
বদরপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, “প্রতিবছর নদীর বাঁধ ভাঙে, গ্রামের পর গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিঃস্ব হয় নদী পাড়ের গ্রামবাসী।”
নিলক্ষী গ্রামের কবির আহমেদ নাসির বলেন, তার জমিতে আমনের বীজবপন করা হয়েছিল। পানিতে সব ডুবে গেছে। কয়েকটি পুকুরের মাছও ভেসে গেছে।
“নদীর স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় আমরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই থাকছি। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।”
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, “পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের অংশগুলো দ্রুত মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। দুর্যোগে তার পক্ষ থেকে যে কোনো সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বাড়ি-ঘর, গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি ও পুকুর/ঘেরে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ করছে।
পানি নেমে গেলে দ্রুত সেসব ক্ষয়ক্ষতি পূরণে বরাদ্দ চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
পুরানো খবর:
মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন, ফুলগাজী-পরশুরামে পানিবন্দি ৩ হাজার পর
ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বাঁধ ভেঙে ডুবছে জনপদ