এ জেলায় সপ্তাহে গড়ে প্রায় দুটি এ ধরনের দুর্ঘটনা হয়। প্রাণহানির পাশাপাশি সম্পদেরও ক্ষতি হচ্ছে, বলছে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য।
Published : 13 Apr 2024, 01:24 AM
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের খিলমার্কেট এলাকায় ভাড়াবাসায় থাকতেন বেসরকারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নবী হোসেন। বেশ কয়েকদিন ধরে বাসায় গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে জানালেও তিনি পাত্তা দেননি।
শীতের রাতে গোসলের জন্য পানি গরম করতে চুলা জ্বালাতে গিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে দগ্ধ হন নবীসহ তার পরিবারের চার সদস্য।
২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে ওই ঘটনায় নবী, তার বাবা সুলতান মিয়া ও ছোটভাই আলী হোসেন প্রাণে বেঁচে গেলেও চারদিন দগ্ধ শরীর নিয়ে লড়াই করে মারা যান ৫০ বছর বয়সী মা সাহিদা বেগম।
ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের স্মৃতি এখনও তাড়া করে নবী হোসেনকে। তার মুখমণ্ডল, দুই হাত ও পাসহ শরীরের অন্তত ২২ শতাংশ পুড়ে যায়।
নবী হোসেন বলছিলেন, “রান্নাঘরে আগুনের সূত্রপাত হলেও তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য দুই কক্ষে। আমি কম্বল গায়ে শুয়েছিলাম। মায়ের শরীরের ৫৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মাকে আর বাঁচানো যায়নি।
“নিজে পুড়ে যাওয়ার কষ্ট থেকেও এই কষ্ট বেশি। কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঘটে গেল।”
ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, শীতের কারণে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। বদ্ধ ঘরে তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে জমা হওয়া গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনটিও গ্যাসের সংযোগও ছিল অবৈধ।
গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড সারাদেশের তুলনায় নারায়ণগঞ্জে বেশি। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, এখানে সপ্তাহে গড়ে প্রায় দুটি এ ধরনের দুর্ঘটনা হয়। তাতে প্রাণহানির পাশাপাশি সম্পদেরও ক্ষতি হচ্ছে।
এসব ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করা হলেও প্রতিকারের কোনো বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায় না।
আর চিকিৎসকরা বলছেন, গ্যাসের আগুনগুলো ছোট হলেও তাতে মানুষের শ্বাসনালী ও মুখমণ্ডল পুড়ে গিয়ে মৃত্যুর পরিমাণ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান
শ্রমিক অধ্যুষিত জনবহুল নারায়ণগঞ্জ জেলায় গত কয়েক বছরে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও আগুনে হতাহতের ঘটনা যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৩১৫টি গ্যাস সংক্রান্ত অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
অর্থাৎ, প্রতি চার দিনে একটি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে গ্যাসের কারণে। এর অধিকাংশ হয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকার কারণে।
কয়েকটি ঘটনায় এলপিজি সিলিন্ডার থেকেও অগ্নি দুর্ঘটনার খবর এসেছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১৩৬ জন হতাহত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদে। গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে সেখানে প্রাণ যায় ৩৪ জনের।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চারটি গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৪ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারাদেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে ৭৭০টি আগুন লাগে যা মোট হিসাবের ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
আর গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ১২৫টি অগ্নিকাণ্ডের তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
কারা বেশি আক্রান্ত
গ্যাসের আগুনে পোড়া রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
এই ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম বলছেন, গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত গ্যাস থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এর শিকার হচ্ছে বেশি। ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে বলছেন তিনি।
“আমরা কিন্তু উচ্চবিত্ত বা একেবারেই দরিদ্র রোগী পাচ্ছি না। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কোনো বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন, তারা এই ধরনের ঘটনার শিকার হচ্ছেন বেশি।
চিকিৎসক বলেন, “লাইন বা সিলিন্ডার থেকে লিকেজ হওয়া গ্যাস বদ্ধ পাকা ঘরে জমে থাকতে পারে, সেখান থেকেই ঘটে দুর্ঘটনা। মূল ঢাকা শহরে এই ধরনের ঘটনা কম। ঢাকার আশপাশে সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এসব এলাকা থেকে রোগীরা বেশি আসছেন।”
তরিকুল ইসলাম বলছেন, “গ্যাস থেকে দুর্ঘটনার পরিমাণ অবশ্যই বেড়েছে। তবে আমাদের রেজিস্টারে যে কোনো গ্যাসের আগুনে পোড়া রোগীদের ফ্লেইম বার্ন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সেটা সিলিন্ডার গ্যাস না লাইনের গ্যাস সেটা পৃথকভাবে উল্লেখ করা থাকে না।
“এজন্য সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজের কারণে কয়টা ঘটনা ঘটল সেটা পৃথকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে পেশেন্ট ডিল করতে গিয়ে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি সাম্প্রতিক সময়ে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গ্যাস থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।”
ঝুঁকি কোথায়
ঘন ঘন গ্যাস বিস্ফোরণের এই ঘটনার পেছনে তিতাসের পুরোনো লাইন নিয়মিত তদারকি না করা, গ্রাহকদের অবৈধ সংযোগ ও সংযোগে কারচুপি এবং বাসাবাড়িতে গ্যাস ও সিলিন্ডারের চুলা ব্যবহারে লোকজনের অসচেতনতাকে কারণ হিসেবে সামনে আনছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী, গ্যাসের কারণে সৃষ্ট আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়। এ দুটি এলাকায় কয়েকশ শিল্প-কারখানায় থাকায় সেখানে ঘনবসতি বেশি। তাছাড়া প্রায়ই সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলারও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। এই তালিকায় রয়েছে বন্দর উপজেলারও কয়েকটি এলাকা।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো বেশিরভাগ ঘটছে বাসাবাড়িতে। শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও এই ঘটনার উদাহরণ রয়েছে।
“বাসাবাড়ির ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে আমরা পরিদর্শনে গিয়ে যা দেখি তা হচ্ছে, চুলার সঙ্গে গ্যাসের পাইপ লাইন ও সিলিন্ডারের লাইনে লিকেজ থাকে। সেখান দিয়ে গ্যাস বের হয়ে যদি বাইরে না যেতে পারে তখন তা ঘরের ভেতরে জমা হয়ে থাকে। গ্যাস জমা ওই ঘরে বৈদ্যুতিক স্পার্ক বা চুলা জ্বালাতে গেলে সেই আগুন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।”
এ ঘটনাগুলো সাধারণত শীতকালে বেশি হয় জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, শীতকালে বেশিরভাগ সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। তখন ঘরে গ্যাস জমার সুযোগ থাকে বেশি।
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করেন ফখর উদ্দিন আহমেদ।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “সব ক্ষেত্রে গ্যাস বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন।
“শুধু বাসাবাড়িতেই নয়, অনেক সময় মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া প্রধান বিতরণকারী লাইনগুলোর লিকেজ থেকেও বিস্ফোরণের অনেক ঘটনা ঘটছে। তিতাসের পুরোনো লাইনগুলোকে মেরামত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বাসাবাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নবী হোসেনেরও এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নারায়ণগঞ্জ জেলার যুবপ্রধানের দায়িত্বে থাকাকালীন বিভিন্ন সময় আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করেছেন।
নবী হোসেন বলেন, “নারায়ণগঞ্জে তিতাসের লাইনগুলো অনেক পুরনো। গ্যাস লাইনগুলোর বিষয়ে আবাসিক ভবনগুলোর মালিকরা যেমন পাত্তা দেন না; তেমনি গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা গ্যাস লাইনে ত্রুটি বা লিকেজ আছে কিনা তা কখনই খোঁজ নিয়ে দেখে না তিতাস। তারা এই ব্যাপারে নিয়মিত তদারকি করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।”
যা বলছে তিতাস
নারায়ণগঞ্জ জেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। নারায়ণগঞ্জের ৫ উপজেলায় প্রায় ৬৬ হাজার বৈধ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। এ ছাড়া ৫৯১ শিল্প কারখানাও রয়েছে তিতাসের গ্যাস সংযোগের তালিকায়।
এই প্রতিষ্ঠানের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আনিসুর রহমানের দাবি, এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রধানত গ্রাহকদের অসচেতনতা।
“তিতাস আবাসিক ভবনের প্রধান লাইনে সংযোগ দেয় কিন্তু চুলার সঙ্গে সংযোগ ভবন মালিকরা দিয়ে থাকেন। সেখানে যদি কোনো প্রকার লিকেজ হয় তা বদ্ধঘরে থাকে, পরবর্তীতে আগুনের সংস্পর্শে তা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটায়।
আনিসুর রহমান বলছিলেন, “অনেক সময় বিভিন্ন সংস্থা তাদের কাজ করতে গিয়েও মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া আমাদের মূল বিতরণকারী লাইনে ছিদ্র করে ফেলে। এই লিকেজ সম্পর্কে না জানার আগে আমাদের কিছু করার থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগ নেওয়ার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।”
২০২০ সালে সদর উপজেলার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিতাসের বিতরণকারী লাইনের লিকেজের বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। ওই সময় জেলা প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে তিতাসকে আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে লাইনগুলো নিয়মিত তদারকির পরামর্শ দেয়।
নিয়মিত তদারকির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, “ঘরে ঘরে গিয়ে তদারকির করার সুযোগ তিতাসের নেই। কারো কোনো ধরনের লিকেজ বা সংযোগে সমস্যা হলে আমরা তাতে কুইক রেসপন্স করি। মূল প্রক্রিয়া এটাই। সুতরাং এক্ষেত্রে গ্রাহকের সচেতনতাই মূল।
“তাদের উন্নতমানের বার্নার ব্যবহার করতে হবে, বার্নার পুরোনো হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে। কোনো লিকেজ হলে তা নিজ উদ্যোগে না সারিয়ে তিতাসকে জানালে আমরা দক্ষ কারিগরের ব্যবস্থা করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকরা আমাদের সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না।”
তবে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় তিতাসের দীর্ঘ বছরের পুরনো লাইনের বিষয়টি স্বীকার করে তা পরিবর্তনের প্রকল্প চলমান রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
দগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই
গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল।
তিনি বলেন, “তিতাস তো দীর্ঘবছর আবাসিক সংযোগ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু তাদের পুরনো লাইনগুলোকে তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে না, মেরামত করে না। এইটা তিতাসের অব্যবস্থাপনার একটি অংশ। তাছাড়া অনেকে আবার চোরাই লাইনগুলো অদক্ষ লোকের মাধ্যমে সংযোগ দেয়। এক্ষেত্রে, তিতাসসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”
নারায়ণগঞ্জের মত জেলায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “শহরের দুটি সরকারি হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দগ্ধ রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটিও নেই। সব রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই রোগীরা অন্তত প্রাথমিক একটা চিকিৎসা জেলা পর্যায়ে পেলে উপকৃত হয়।”
গ্যাস দুর্ঘটনা এড়াতে
গ্যাসের চুলার রান্নায় যেমন স্বাচ্ছন্দ্য আছে, তেমন আছে ঝুঁকিও। বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, সামান্য একটু সতর্কতা প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
গ্যাসের গন্ধ: গ্যাস লিকেজ হলে গন্ধ বের হয়। সেটা পেলে সাবধান হতে হবে। গ্যাসের গন্ধ নাকে এলে কোনো রকম আগুন বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি না চালিয়ে দরজা-জানাল খুলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করতে হবে।
লাইনের প্রিপেইড গ্যাসের মিটার চুলা বন্ধ থাকলেও যদি ঘোরে তাহলে বুঝতে হবে লিকেজ হয়েছে।
শব্দ: গ্যাস লিকেজ হলে চুলা বা সিলিন্ডার থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাতাস চলাচল: যেখানে গ্যাসের চুলা বা সিলিন্ডার রয়েছে সেই জায়গায় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রান্নার সময় রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে।
সিলিন্ডার সংরক্ষণ: গ্যাস সিলিন্ডার সমতল জায়গায় রাখতে হবে। এটিকে শুইয়ে রাখা যাবে না। ভরা সিলিন্ডার গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। গ্যাসের চুলা থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে। চুলার অবস্থান সিলিন্ডারের চেয়ে ওপরে থাকবে। সিলিন্ডারের সেইফটি ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হবে।
পাইপ, নব ও রেগুলেটর পরীক্ষা: গ্যাসের সিলিন্ডার সাধারণত বিস্ফোরণ বা লিকেজ হয় না। সিলিন্ডারের ভাল্ব বা ‘রিং’ ত্রুটিপূর্ণ হলে মুখ থেকে গ্যাস বের হতে পারে। এ ছাড়া সিলিন্ডারের রেগুলেটর ও চুলার নব ত্রুটিপূর্ণ হলে গ্যাস বের হতে পারে। হোস পাইপেও লিকেজ থাকতে পারে। বছরে অন্তত একবার গ্যাসের চুলার সরঞ্জামগুলো পেশাদার লোককে দিয়ে পরীক্ষা করান। সাবান-পানি ছিটিয়ে লিকেজ শনাক্ত করা সম্ভব।
সর্বোপরি প্রতিবার রান্নার পর সতর্ক হয়ে চুলা বন্ধ করতে হবে। রান্নাঘরের জানালা খোলা এবং প্রতিবার চুলা জ্বালানোর আগে গন্ধ বা শব্দের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
(এ প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা অন্তু)