খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জমিতে বিদেশি জাতের আম চাষে পুরোপুরি সময় দিতে সরকারি চাকরি ছেড়েছেন মংশিতু চৌধুরী। উপযুক্ত আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে পাহাড়ে আমের ভালো ফলনও পাওয়া যাচ্ছে।
দেশি জাতের তুলনায় বিদেশি জাতের আম ৫ থেকে ৬ গুণ দামে বিক্রি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকার আমচাষি মংশিতু চৌধুরী গত বছরের অক্টোবরে সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। ছোট-বড় টিলায় প্রায় ৪২ প্রজাতির আমের চাষ করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে তিনি অন্তত ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছেন।
মংশিতুর বাগানে কাজ করছেন সাতজন শ্রমিক। তারাও এখান থেকে মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে বিদেশি রঙিন আম। আমেরিকান পামলার, রেড আইভরি, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত, ব্যানানা ম্যাংগো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, মিয়াজাকি বা সূর্যডিম, অস্ট্রেলিয়ান কেনসিংটন প্রাইড, হানিডিউ, আরটুইটুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আমের চাষ করেছেন মংশিতু।
প্রচলিত দেশি আমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হয় এসব আম।
মংশিতু চৌধুরী বলেন, “২০০৬ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। চাকরির পাশাপাশি নিজের জমিতে আম বাগান গড়ে তুলেছি।
“বাগানের পরিসর বাড়ার পর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। গত বছরের অক্টোবরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেই। এখন বাগানে সময় দিচ্ছি।”
তিনি জানান, আম্রপালি, বারি ফোরসহ অন্যান্য দেশি আমের ফলন ভালো হয়। প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিদেশি আমের দাম কয়েকগুণ বেশি।
“ফলে বিদেশি আমের চাষ বাড়াতে কাজ করেছি। সফলও হয়েছি। চলতি মৌসুমে অন্তত ১৫ লাখ টাকার বিদেশি আম বিক্রির আশা করছি।”
প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম ৯০০ টাকা, রেড আইভরি ৭০০ টাকা, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত ৯০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু ৬০০ টাকা ও হানিডিউ ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানান মংশিতু।
তবে দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি জাতের আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। এসব আম অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়ে থাকে।
বিদেশি আমের চারা সংগ্রহের বিষয়ে মংশিতু বলেন, “ইতালি প্রবাসী এক স্বজনের মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করেছি। তবে এটি চাষাবাদে বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। দেশি আমের মতো চাষাবাদ করা যায়।”
এদিকে পাহাড়ে বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
সেইসঙ্গে পাহাড়ে চাষ উপযোগী বিদেশি জাতের আম কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া কথা বলেছেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আলতাফ হোসেন।
তিনি বলেন, “দেশে বেশ কিছু রঙিন জাতের বিদেশি আম এসেছে। বিদেশে এসব জাতের আম বেশ জনপ্রিয় এবং ফলনও হয় বেশি। আমাদের কৃষকরা এসব বিদেশি জাতের আম চাষ করে ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন।”
চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমের চাষ হয়েছে; এর মধ্যে ৫ হেক্টর জমিতে বিদেশি আমের চাষ হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, “দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। এবার ব্যানানা ম্যাংগোর আড়াই হাজার ও কাটিমন আমের তিন হাজার চারা করেছি।
“কৃষকেরা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামীতে এর পরিসর আরও বাড়ানো হবে।”
এদিকে আমচাষি মংশিতু চৌধুরীকে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী কৃষকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে কিশোর কুমার জানান।