“মানুষের স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।”
Published : 09 Oct 2024, 04:54 PM
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
বুধবার ভোর থেকে মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সকাল পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকাও প্লাবিত হয়নি। তবে বন্য কবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নতুন করে বৃষ্টি না হলে পানি নামতে আরও দুই-একদিন সময় লাগবে। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায় নাই বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, “রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় বুধবার ভোর থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। বাড়ি-ঘরের পানি এরইমধ্যে নামতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টি আর না হলে দুই একদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।”
এদিকে তিন উপজেলায় নগদ সাত লাখ টাকা ও ৬৩ মেট্রিকটন চাল বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
বন্যায় ফুলপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বুধবার সকালে উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ভাটপাড় ও সিংহেশ্বর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
ভাটপাড় গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, “সকাল থেকে পানি কমছে। তবে বাড়ির উঠানে এখনও কোমর পানি। তাই ছাগলটিকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।
“বৃষ্টি না হলে আরও দুই একদিন লাগবে পানি নামতে। কয়েকটা দিন দুর্ভোগে থাকলেও কেউ কোন সহযোগিতা করেনি।”
একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলছিলেন, “১৯৮৩ সালের পর এবারের বন্যা সবচেয়ে বড় হয়েছে। আমার ৯০ কাঠা জমির ধান তলিয়ে আছে পানিতে। কোনো উপায় খোঁজে পাচ্ছি না।
“আমার মত হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল হবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ত্রাণ সহায়তা করলেও প্রশাসনের কেউ আসেনি।”
সিংহেশ্বর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নয়ছুদ্দিন আকন্দ বলেন, “মানুষের স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এরশাদের সময়ে বাংলাদেশ বন্যা হয়েছিল তখন ব্রিটেনের রাজারানি এসেছিলেন সহায়তা নিয়ে।
“এখন আর এমনটি হয় না। আমরা চাই অন্তত আমাদের সরকার সহযোগিতা করুক।”
হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল গ্রামের হাসিনা বানু বলেন, “মানুষের বাসায় কাজ করে আমার দিন চলত। বন্যার কারণে এখন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়
“এখন দুইবেলা ঠিক মত খেতেও পারছি না। কোনো ধরনের সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ত্রাণসামগ্রী আমাদের খুব প্রয়োজন।”
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, “বন্যায় এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে সকাল থেকে ফুলপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
“আশা করছি বৃষ্টি না হলে দ্রুত পানি নেমে যাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, “আজকে নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি। তবে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, পানি কমে যাবে।
“আমাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন বানভাসিদের মাঝে শুকনো খাবার, ওষুধ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।”
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে হালুয়াঘাটে বন্যার সৃষ্টি হয়। উজানের পানি কমে এখন নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, “হালুয়াঘাটে ১৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাময়িক ভাবে তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ক্ষতি নিরুপণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”