বিয়ের সপ্তাহ না ঘুরতেই চুরমার সোনিয়ার স্বপ্ন

সোনিয়াকে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি; তার শরীরে গুরুতর জখম থাকায় কথা বলছেন খুব আস্তে; কয়েকবার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করেছেন।

মানিক আকবরচুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 06:36 PM
Updated : 5 March 2023, 06:36 PM

বিয়ের এক সপ্তাহ না ঘুরতেই স্বামীকে হারিয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে সোনিয়ার স্বপ্ন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে স্বামীর মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না এই নববধূ। 

বিয়ের পর ঘুরতে বের হয়ে গত বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোনিয়ার স্বামী শামিম হোসেন (২২) নিহত হন। গুরুতর আহত হন সোনিয়া।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছাড়াও সোনিয়ার ডান পা ভেঙে গেছে; গুরুতর জখম হয়েছে ডান হাতে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের ইউনাইটেড ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন সোনিয়া। ডান হাত প্লাস্টার করা হয়েছে; পায়ের অপারেশনের প্রস্তুতি চলছে।  

স্বজনরা জানিয়েছেন, হতদরিদ্র সোনিয়ার চিকিৎসা চলছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ব্যক্তির আর্থিক সহায়তায়।  

রোববার বিকালে ইউনাইটেড ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সোনিয়া ক্লিনিকের ১ নম্বর কেবিনে ঘুমিয়ে আছেন। পাশে তার নানি হাফিজা বেগমকে পাওয়া যায়।

তিনি জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শামিমের সঙ্গে সোনিয়ার বিয়ে হয়। শামিম সদর উপজেলার ফুরশেদপুর গ্রামের মৃত শরীফুদ্দিনের ছেলে। সোনিয়া সদর উপজেলার বড়শলুয়া গ্রামের মনিরুদ্দিনের মেয়ে।

হাফিজা বলেন, গত বৃহস্পতিবার শামিম স্ত্রী সোনিয়া ও শ্যালকের স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। রাত ৮টার দিকে হিজলগাড়ি এলাকায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির খামারের কাছে একটি কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনই ছিটকে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান শামিম। গুরুতর আহত হন তার সোনিয়া।

সোনিয়ার খালু বিল্লাল হোসেন জানান, সোনিয়া যখন ছোট তখন থেকেই সোনিয়ার বাবা ও মায়ের সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই থেকে সোনিয়া তার নানির কাছে থেকে বড় হয়েছে।

বিল্লাল হোসেন জানান, দুর্ঘটনার পর সোনিয়া প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাকে ইউনাইডেট ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়।

“এখানে গ্রামের পরিচিত এক ছেলে চাকরি করে। এখানে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে, সেজন্য সোনিয়াকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে এনে ভর্তি করা হয়।”

বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, “আমরা খুবই গরিব। চিকিৎসা করানোর মতো টাকা-পয়সা নেই। ভালো চিকিৎসার জন্য টাকা বেশি খরচ হলেও ধার দেনা করে চিকিৎসা করাব ভেবে এখানে এনেছি।”

তিনি বলেন, চিকিৎসার খরচের কিছু টাকা একজন দিয়েছেন। তিনি নাম পরিচয় বলতে নিষেধ করেছেন। সেই টাকায় চিকিৎসা চলছে। ডান হাতের প্লাস্টার হয়ে গেছে।

“খুবই সুখে ছিল সোনিয়া। হাসি-খুশিতে দিন কাটছিল তাদের। দুর্ঘটনা সব তছনছ করে দিল।”

সোনিয়ার স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন সোনিয়ার স্বামী। কিন্তু সোনিয়াকে স্বামী মারা যাওয়ার খবর জানানো হয়নি। সোনিয়ার শরীরে গুরুতর জখম থাকায় কথা বলছেন খুব আস্তে। বেশ কয়েকবার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করেছেন।

ক্লিনিকের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ঝন্টু সন্ধ্যায় বলেন, সোনিয়ার পায়ে অপারেশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রাতেই অপারেশন করা হবে। আমেরিকা প্রবাসী একজন চিকিৎসার খরচ দিচ্ছেন। ক্লিনিকের পক্ষ থেকেও যতদূর সম্ভব সহায়তা করা হবে।