বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নেত্রকোণা শহরের অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাহকের প্রায় ২৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ আছে ১৫ মেগাওয়াটের মত।
Published : 24 Apr 2024, 07:19 PM
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও ঘন ঘন লোড শেডিংয়ে নেত্রকোণায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, সেখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
অপরদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, শহরের অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাহকের প্রায় ২৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ আছে ১৫ মেগাওয়াটের মত। এ কারণে লোড শেডিং করতে হচ্ছে।
দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে গত কয়েক দিন বিভিন্ন স্থানে দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। ঈদের ছুটির পর একদিকে গরম, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার চাহিদা বাড়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এতে লোড শেডিংও বেড়েছে।
এর মধ্যেই সোমবার রাত ৯টার দিকে ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার তথ্য দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এটাই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন।
তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন যখন ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে তখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৪৬ মেগাওয়াট লোড শেডিং চলছিল। কারণ ওই সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট।
নেত্রকোণা শহরে প্রায় ১৫ দিন ধরে গড়ে ৮ থেকে ১০ বার লোড শেডিং হচ্ছে। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বাসার ফ্রিজে থাকা সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে; ফ্রিজ, টিভি অচল হয়ে যাচ্ছে; শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে, বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হচ্ছেন। আবার দোকানিরা বলছেন, লোড শেডিংয়ের ফলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নেত্রকোণার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী বরুণ ব্যানার্জী বলেন, “শহরে ৫৬ হাজার ৩৩৭ জন গ্রাহকের বিপরীতে ২২ থেকে ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে ১৪ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। এতে এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের ঘাটতিসহ গরমে চাহিদা বাড়ায় শহরে থাকা নয়টি ফিডারেই লোড শেডিং দিতে হচ্ছে।”
শহরের নাগড়া এলাকার বাসিন্দা মীর মনিরুজ্জামান বলেন, “দিনে ৮ থেকে ১০ বার লোড শেডিং দিচ্ছে। লোড শেডিংয়ের কোনো সময়-অসময় নাই। যখন তারা মন চাইতাছে তখনই লোড শেডিং দিতাছে। এই গরমে বাসায় আমার বৃদ্ধ বাবা ও মা। দুইজনই অসুস্থ। বিদ্যুতের এই অবস্থায় বাবা-মা কাহিল হয়ে পড়ছেন।
“ছেলেটা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা নাগাদ কখন কারেন্ট আইব আর কখন যাইব তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই। এতে করে ছেলেটার লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। কার কাছে এর বিহিত চাইবাম।”
একই অবস্থার কথা জানালেন নিউটাউন এলাকার কল্পনা সূত্রধর। তার এক ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে এবং মেয়ে কলেজে পড়ে।
তিনি বলছিলেন, “সারাদিনই বিদ্যুৎ আইতাছে আর যাইতাছে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ক্ষতি হইতাছে। ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখতাম পারতাছি না। নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুতের যাওয়া-আসায় আমার বাসার টিভিটা নষ্ট হইছে। এই গরমে অসুস্থ হইয়া যাইতাছি।”
সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মলয় রঞ্জন সরকার। স্ত্রী, চার বছরের মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সংসার।
মলয় রঞ্জন সরকার বলেন, “প্রায় ১৫ দিন ধরে বিদ্যুতের লোড শেডিং নিয়া বিপাকে আছি। রাতে খাবার খেতে একসঙ্গে সবাই বসেছি, অর্ধেক খাওয়া হতেই কারেন্ট চলে গেল। এটা বলা যায় রুটিন হইয়া দাঁড়াইছে। আমার বিদ্যুৎ ও অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা। বিদ্যুতের এই অবস্থায় দোকানের আয়ও কমে গেছে। বিদ্যুৎ আসে আর যায়। মেয়েটাও গরমের কারণে পেটের পীড়ায় পড়ছে। কী আর করবাম।”
পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী বরুণ ব্যানার্জী বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব সময় একরকম চাহিদা থাকে না। সকালে একরকম, সন্ধ্যায় অন্যরকম; আবার রাতে আরেকরকম চাহিদা। তবে সন্ধ্যায় চাহিদা বাড়ে। তখন তুলনায় লোড শেডিংটা একটু বেশি হয়।
“গতকাল (মঙ্গলবার) ২২ মেগাওয়াট চাহিদা ছিল। সরবরাহ ছিল ১৬ মেগাওয়াট। বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। যেভাবে তাপ বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে।”
কবে নাগাদ লোড শেডিং কমতে পারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এই প্রকৌশলী বলেন, “আবহাওয়া একটু স্বাভাবিক হলেই বিদ্যুৎ সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।”