রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. জানে আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে।
সোমবার রাজশাহীর স্পেশাল ট্রাইবুনাল ও জ্যেষ্ঠ দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বজলে তৌহিদ আল হাসান বলেন, শুনানি শেষে আদালতের দায়রা জজ আব্দুর রহিম মামলাটি আমলে নিয়ে রাজশাহী জেলা সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে আগামী ২মে মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি দুদককে তদন্ত করার আদেশ দিয়েছে।
মামলার অভিযোগের বরাতে বাদীর আইনজীবী রায়হান কবির বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মো. জানে আলম ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর যোগদান করেন। এরপর থেকে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘অবৈধভাবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা’ উপার্জন করেছেন।
“এই অর্থ থেকে তিনি তার পাবনার বেড়া উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ, জায়গা-জমি ও গবাদি পশু পালনের খামার তৈরি করেছেন।”
এছাড়া নামে বে-নামে অনেক জায়গা-জমি ক্রয় করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলায় জানে আলমের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
এতে বলা হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে এসেছে। এই প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন ইটভাটা থেকে ইট ও বালুমহাল থেকে বিনামূল্যে জোরপূর্বক বালু নিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হলেও তিনি সরকারিভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ দেখিয়েছেন।
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করার জন্য ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন; টিআর-কাবিখাতে উন্নয়নমূলক কাজে ১০ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করেন; এডিপির টাকায় ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ নিয়ে কমিশন গ্রহণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হলেও আদিবাসীদের ঘর দেওয়া হয়নি; বরং ইউএনও টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এ কারণে অনেক আদিবাসী টাকা না দিতে পারায় ঘর পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে বলে মামলায় বলা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ না পেয়ে বিএমডিএ-এর কাজে বাধা প্রদান করেন।
উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭৮ নম্বর রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ নম্বর দাগের ১ একর ৮৬ শতাংশ খাস পুকুর ১১ লাখ ৭ হাজার ৫৪২ টাকা ব্যয়ে পুনঃখননের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পায় মেসার্স আলী হোসেন এন্টারপ্রাইজ। এরপর ঠিকাদার আরিফ হোসেন ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর পুকুরটি পুনঃখননের কাজ শুরু করে।
সেখান থেকে ইউএনও জানে আলম পুকুর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন; কিন্তু আসামি ঘুষের টাকা না পাওয়ায় গত ৫ জানুয়ারি গোদাগাড়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসানকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
ওই অভিযানে খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটরের ক্ষয়ক্ষতি করেন এবং গাড়ির হেলপার আল মারুফকে ১৫ দিনের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ অভিযোগে ঠিকাদার আরিফ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পুকুর খননের অনুমতি, পারিবারিক কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার, টেন্ডার ছাড়া উপজেলা চত্বরের আম গাছের আম বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, ৮৮টি খাস পুকুর ইজারায় দুর্নীতি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগে দুর্নীতি এবং মোবাইল কোর্ট আইনের ৮ ও ৯ ধারা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন আসামিকে সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে জরিমানা করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।
মামলার বিষয়ে জানতে ইউএনও জানে আলম বলেন, “মামলার বিষয়ে আমি জানি না। অফিসের কাজে বাইরে আছি। অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জেনে জানানো হবে।”