পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার আশোক কুমার পাল বলেন, সকালে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। বেলা ১১টার পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
Published : 30 Mar 2025, 12:46 PM
পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল যাবেন মো. মামুন। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সকাল সকাল বের হয়েছেন গাজীপুরের এই পোশাক শ্রমিক। কিন্তু চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো গাড়িতে উঠতে পারেননি তারা।
মামুন বলেন, “রাস্তায় অনেক গাড়ি, তার থেকে বেশি মানুষ। যখনই কোনো বাস থামছে সবাই ওই গাড়িতে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে দিচ্ছে। কিন্তু আমি তো বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সেভাবে উঠতে পারছি না।”
তার মতো পরিবারের চার সদস্য নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক পোশাক শ্রমিক মো. নাসির। তিনি যাবেন নেত্রকোনা, কিন্তু একসাথে সিট না পওয়ায় উঠতে পারছেন না তারা।
পরে বিকল্প যানে গন্তব্যে যাওয়ার চিন্তা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকেই ট্রাক-পিকাপে করে যাচ্ছে, কিন্তু ছেলে-মেয়ে নিয়ে ওঠার সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? মনে হয় সেভাবেই যেতে হবে।”
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের ঈদ যাত্রায় রোববার ভোর থেকেই ঢাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। পাশাপাশি সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।
এতে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা এবং কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় যান চলাচল করছে ধীরগতিতে।
চন্দনা চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের উত্তর সীমানায় যেখানে গাড়ি ধীরগতিতে যাচ্ছে সেখানে অপেক্ষা করছে শত শত মানুষ। যখনই সেখানে কোন গাড়ি গিয়ে থামছে অপেক্ষমান যাত্রীরা ওই গাড়িতে ওঠার জন্য চেষ্টা করছেন। সিট খালি না পেয়ে অনেকেই বিফল হচ্ছেন।
তবে বিভিন্ন স্থানে গাড়ির চাপ থাকলেও নেই দীর্ঘ যানজট। যানজট নিরসন ও ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বিশেষ করে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যানবাহনগুলো গাজীপুরের চান্দনা- চৌরাস্তা এলাকায় ফ্লাইওয়েতে ময়মনসিংহগামী লেনে উঠে শেষ প্রান্ত দিয়ে নামতে গিয়ে কিছু বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানোর কারণে ফ্লাইওয়েতে যানবাহনের ধীরগতি সৃষ্টি হয়।
যার প্রভাব দক্ষিণে বোর্ড বাজার, উত্তরে তেলিপাড়া এবং পশ্চিমে নাওজোর পর্যন্ত দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়।
গাজীপুরের নাওজোর মহাসড়ক থানার ওসি মো. রইচ উদ্দিন বলেন, “ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা-ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে রোববার ভোর থেকেই গাড়ির চাপ বেড়ে যায় তবে কোন যানজট নেই। অনেকটা স্বস্তি নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন সাধারণ মানুষ।”
পুলিশ বলছে, ঈদকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ। যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশ, সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন সংস্থা এক যোগে কাজ করছে।
রোববার ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ড বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে তেলিপাড়া পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।
এর কারণ হিসেবে ওর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল মো. মামুন বলেন, “চন্দনা চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের উত্তরের (শেষ) প্রান্তে যেখানে মূল সড়কে গিয়ে নেমেছে সেখানে কিছু গাড়ি থেমে যাত্রী উঠানোর কারণে এবং চৌরাস্তা মোড়ের পশ্চিম দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অপেক্ষমান গাড়িগুলো যাত্রী তুলে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ময়মনসিংহের দিকে রওনা হয়।
“পরে এ গাড়িগুলোও চান্দনা-চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের শেষ প্রান্ত অতিক্রমের সময় জটলা তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ছে উত্তরে তেলিপাড়া, দক্ষিণে বোর্ডবাজার এবং পশ্চিমে নাওজোর পর্যন্ত।”
ময়মনসিংহগামী আলম এশিয়া পরিবহনের হেলপার মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করে রোববার সকালে ময়মনসিংহে যাত্রা পথে গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকা থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড়ের ফ্লাইওয়ের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লেগেছে। অন্য সময় যা হল পাঁচ মিনিটের পথ। “
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার আশোক কুমার পাল বলেন, শনিবার দুপুরে গাজীপুরের কারখানা ছুটি হওয়ার পর বিকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। রোববার সকালেও মানুষ বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠানাম করায় কিছুটা জটলার সৃষ্টি হয়েছে। চাপ থাকলেও গাড়ি থেমে নেই।
“রোববার ভোর থেকেই ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদিন সকাল সাতটার দিকে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর স্টেশনরোড, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, মালেকের বাড়ি, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা মোড় ও এর আশপাশের অংশ, তেলিপাড়া এলাকায় ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে।”
তিনি জানান, চন্দনা চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের ওপরের গাড়ির চাপ কমাতে ঢাকা-মুখী লেন বন্ধ করে মাঝে মাঝেই ময়মনসিংহের দিকে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই পথে গাড়িগুলো বিআরটিসি ট্রেনিং সেন্টারের সামনের কাটা অংশ দিয়ে ময়মনসিংহগামী লেনে উঠে উত্তরের পথে চলে যাচ্ছে। ফলে যানজট হচ্ছে না।
পরে রোববার দুপুরে তিনি বলেন, সকালে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। বেলা ১১টার পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
নাওজোর হাইওয়ে থানার ওসি রইছ উদ্দিন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানজট নিরসনের দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় জেলা, মেট্রোপলিটন ও হাইওয়ে পুলিশের চার হাজার সদস্য কাজ করছেন।”