ঘটনার দিন ওই ইউএনও এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
Published : 12 Dec 2024, 12:36 AM
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ বলে মন্তব্য করার অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা।
বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এমন অভিযোগ তোলার পর ওই ইউএনওকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
তবে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন এ রকম কোনো মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন।
এদিকে রাতে ইউএনও আল মামুনকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। ঘটনার দিন তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে দাবি তাদের।
দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সভায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল অভিযোগ করে বলেন, “সম্প্রতি সদরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও আল মামুন। অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য দেই। সেখানে দিল্লি না ঢাকার প্রশ্নে বলা হয়েছিল, দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না।
“পরে ওই ইউএনও আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমোরো (আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ অথবা আগামীকাল)’।”
ছাত্র নেতার এমন বক্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে ওই ইউএনওকে প্রত্যাহারের জন্য ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদারকে নির্দেশ দেন।
পরে সচিব ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশে বলেন, “আপনার সঙ্গে আমি একমত। যারা আমার সঙ্গে একমত হবে না, তাহলে আমি চলে যাব।”
তিনি বলেন, “আজকের মধ্যে এই ইউএনও বদলি হবে এবং আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে ফিরে তাকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করব। আমি পাবলিকলি বলে গেলাম, এত দুঃসাহস?
“এখনো যারা পরিবর্ধিত সরকারের পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। যদি কোনো পুরুষ বা কোনো পদ-পদবিধারী কেউ এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাহলে গোপনে আমাদের সংবাদ দেবেন।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আল মামুন বলেন, “আমি এমন কোনো কথাই বলিনি। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা বলি তখন সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই ধরনের কথা বলা হয়নি।”
ওই ছাত্রনেতা কেন তাকে নিয়ে এমন অভিযোগ করলেন, তা বুঝতে পারছেন না বলে জানান ইউএনও।
ইউএনওকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
ফরিদপুরের সদরপুর ইউএনও আল মামুনকে প্রত্যাহারের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক রাতে সদরপুর উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তারা সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়।
ঘটনার দিন ইউএনও আল মামুন ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ এমন মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদরুজ্জামান।
তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মৌখিক প্রত্যাহারের আদেশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধসহ সত্যতা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
এ সময় সদরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী, সদস্যসচিব তরিকুল ইসলাম কবির, যুগ্ম-আহ্বায়ক বাহালুল মাতুব্বর, বাবুল হোসেন, জামায়াতে ইসলামী সদরপুর শাখার আমির মো. দেলোয়ার হোসেন, যুবদল নেতা মো. বিল্লাল হোসেন, ছাত্রদল নেতা তুষার মাহমুদ, সদরপুর উপজেলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রুমন মাতুব্বর এবং সদরপুর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হাসিব সিয়াম উপস্থিত ছিলেন।