প্রায় ৯ দিন ধরে কাজ করার পর সোমবার নদী থেকে কচুরিপানার স্তূপ অপসারণ সম্পন্ন হয়।
Published : 27 Nov 2024, 10:52 AM
অবশেষে মধুমতি নদী থেকে কচুরিপানার স্তূপ অপসারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ২৫ দিন পর গোপালগঞ্জসহ ছয় জেলার মধ্যে নৌ চলাচল সচল হয়েছে।
প্রায় ৯ দিন ধরে কাজ করার পর সোমবার নদী থেকে কচুরিপানার স্তূপ অপসারণ সম্পন্ন হলে মঙ্গলবার থেকে এই পথে নৌ চলাচল সচল হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম রেফাত জামিল।
এর আগে নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজের নিচে মধুমতি নদীতে কচুরিপানা জমতে থাকে। এ কচুরিপানা স্তূপ হয়ে গোপালগঞ্জের সঙ্গে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনা জেলার সরাসরি নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ‘মধুমতিতে কচুরিপানার স্তূপ: গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ’ এই শিরোনামে গত ১৬ নভেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সদর উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে নড়েচড়ে বসেন তারা। ১৮ নভেম্বর থেকে মধুমতি নদী থেকে কচুরিপানা অপসারণ শুরু করা হয়।
মানিকহার সেতুটি গুচ্ছ পিলার দিয়ে তৈরি। প্রতিটি গুচ্ছে ছয়টি করে ফাঁকা ফাঁকা পিলার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গুচ্ছ পিলার মধুমতি নদীর মধ্যে পড়েছে।
মানিকহার গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, “সেতুর পিলারের ফাঁকে ফাঁকে আটকে গিয়ে নদীর ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে কচুরিপানা। স্তূপ এতটাই পুরু হয়েছিল যে, তার উপর দিয়ে এখানে ঘুরতে আসা উৎসুক জনতা পায়ে হেঁটেই নদী পার হতে পারতো।”
তিনি আরও বলেন, “দুই বছর আগেও একবার এই অবস্থা হয়েছিল। সে সময়েও সরকারি উদ্যোগে এটি অপসারণ করা হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত খাঁ বলেন, কচুরিপানার স্তূপ জমায় এ পথে নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ অন্য নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে কম পণ্য পরিবহণ খরচ বেড়ে গিয়ে ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর প্রশাসন মধুমতি নদী থেকে কচুরিপানা অপসারণ করেছে।
গোপালগঞ্জে মধুমতি থেকে কচুরিপানা অপসারণ শুরু
মধুমতিতে কচুরিপানার স্তূপ: গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ
স্থানীয় যুবক জাহিদুল খান বলেন, “আগের মত সরাসরি নৌ চলাচল করতে পারায় নৌকায় করে উরফি হাটে আসা লোকজন উপকৃত হচ্ছেন। এখন আর ২৫ কিলোমিটার ঘুরে নড়াইল জেলার যোগানিয়া হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে না।”
উরফি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, এ জেলার প্রধান নদী মধুমতি। এ নদী দিয়ে প্রতিদিন ৬ জেলার অন্তত ২০০ নৌযান চলাচল করে। সেতুর পিলারে কচুরিপানা জমে আস্তে আস্তে তা বিশাল স্তূপে পরিণত হয়েছিল। এতে নৌ চলাচল বন্ধের পাশাপাশি সেতুর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিরও আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ”
“তবে প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে মধুমতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ করায় এখন নির্বিঘ্নে নৌ চলাচল করতে পারছে। এ জন্য জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম রেফাত জামিল বলেন, “কচুরিপানার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে এ পথে নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ অন্য নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে গোপালগঞ্জের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, নড়াইল, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
“ফলে এ নদী ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাকারীদের ক্ষতি হয়েছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার হবার পর আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। ”
তিনি আরও বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মানিকহার সেতু এলাকার কচুরিপানার স্তূপ পরিষ্কার করে দিয়েছি। এতে দূর-দূরান্ত থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা পরিচালনার প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে।”