নদী ও বৃষ্টির পানিতে প্রকল্প এলাকা প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
Published : 25 Oct 2022, 11:27 PM
সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালে নানা খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নদী ও বৃষ্টির পানিতে প্রকল্প এলাকা প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছ
প্রবল ঝড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। খুঁটি ভেঙে, তার ছিঁড়ে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগেরও ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিভাগের ছয় জেলার ১২ হাজার ১২টি দিঘি, পুকুর ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি প্রতিটি জেলার ক্ষয়ক্ষতির একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন। এখানে জেলাওয়ারী হিসাব দেখানো হলো।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভোলা জেলায়। ভোলায় ৬ হাজার ২৮০টি দিঘি, পুকুর ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৩৭ তশমিক ৩৭ মেট্টিক টন মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪ হাজার টাকা।
পটুয়াখালী জেলায় মোট ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালীতে ২ হাজার ১৩২টি দিঘি, পুকুর ও খামারের এক হাজার ৮৫০ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪১৪ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে নার্সারী মালিকের মাছের পোনা রয়েছে ৪৩ লাখ।
মাছ ভেসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পোনা ভেসে যাওয়ায় নার্সারী মালিকের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টাকার।
৫০টি নৌকা ও ট্রলার ডুবে গেছে এ জেলার।
ক্ষয়ক্ষতিতে বরিশাল জেলা তৃতীয় অবস্থানে আছে। এ জেলায় ১ হাজার ৮৪৩টি দিঘি, পুকুর ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ হাজার ৪১৬ জন খামারি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ভেসে গেছে ৫৮৫ মেট্রিক টন মাছ; এর মধ্যে পোনা ২৪ লাখ। ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পোনা ভেসে গেছে ৫৪ লাখ টাকার। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৯৯ লাখ টাকার। মোট ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ঝালকাঠি জেলায় ৯১৪টি দিঘি, পুকুর ও খামার ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৮৩১। মাছ ভেসে গেছে ৮৩ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন। নার্সারী থেকে পোনা ভেসে গেছে ২ লাখ ১১ হাজার। ভেসে যাওয়া মাছের মূল্য ১ কোটি ৫৪ লাখ ১ হাজার টাকা। ভেসে যাওয়া পোনার মূল্য ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতি ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। মোট ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।
বরগুনা জেলায় ভেসে গেছে ৪৬৮ দিঘি, পুকুর ও খামার। চাষির সংখ্যা ৩৯৩। মাছ ভেসে গেছে ৮৩ মেট্রিক টন। নার্সারী থেকে পোনা ভেসে গেছে দুই লাখ। ভেসে যাওয়া মাছে ক্ষতি হয়েছে ৯৯ লাখ টাকা। সাত লাখ টাকার পোনা ভেসে গেছে। নৌকা ও ট্রলার ডুবেছে ৫টি। ক্ষতি হয়েছে ৬ লাখ টাকা। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ৮ লাখ টাকা। মোট ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
পিরোজপুর জেলায় ক্ষতি হয়েছে ৩৭৫টি দীঘি, পুকুর ও খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪১৯ জন। মাছ ভেসে গেছে ১২৭ মেট্রিক টন। ভেসে যাওয়া মাছের মূল্য এক কোটি ৯২ লাখ টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামের মাছের খামারী বাপিন ব্যানার্জি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খয়রাবাদ নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে পুকুর ডুবে গেছে। এতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে।
বরিশালে ‘৩ হাজার ১৪১’ ঘর বিধ্বস্ত
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালে ৩ হাজার ১৪১টি ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হিজলা উপজেলায়। এ উপজেলায় ২২০০ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপরে বাকেরগঞ্জে ১৮১টি ঘর বিধ্বস্ত হয়। আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৩৫টি, গৌরনদীতে ১১৫টি, উজিরপুরে ১৫০টি, বানারীপাড়ায় ১০০টি, বাবুগঞ্জে ১০৫টি, মুলাদীতে ৬০টি, বরিশাল সদর ও মহানগরে ৬০টি বিধস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ২ হাজার ৫০৮টি আংশিক এবং ৬৩৩টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
বরিশাল জেলায় প্রায় ৯০ হাজার ৬২১ জনের মাঝে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
বরিশাল বিভাগে পল্লী বিদ্যুতের ক্ষতি প্রায় ‘তিন কোটি’ টাকা
সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বরিশাল বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বরিশাল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দীপঙ্কর মন্ডল ও উপ-পরিচালক (কারিগরি) মো. আক্তারুজ্জামান স্বাক্ষরিত ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, বরিশাল জোনের আওতাধীন বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ ও ২ পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও ভোলা সমিতির বিভিন্ন স্থানে ৩৩২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। এছাড়া ক্রস আর্ম ভেঙেছে ৫৮২টি, টান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১১৯টি, তার ছিঁড়েছে তিন হাজার ৮৩ স্থানে, মিটার নষ্ট হয়েছে এক হাজার ১৭৪টি, ‘ইন্সুলেটর ক্র্যাক’ করেছে ৪৯৫টি।
এতে মোট ২ কোটি ৯৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৩০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
তথ্য বিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন চালুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকবল, সংশ্লিষ্ট সমিতির লোকবলের সহায়তায় ভাঙা খুঁটি পরিবর্তনের কাজ চলছে। এছাড়াও ছেঁড়া তার মেরামতে লাইনম্যানের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ করছেন।
এসব কাজের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারও উপস্থিত রয়েছেন বলে বিবরণীতে জানানো হয়।