প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা এবারই প্রথম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
Published : 08 Mar 2024, 05:12 PM
সংসদ সদস্য বাবার নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করলেও এবারই প্রথম প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা।
অনেকটা বাবার গোছানো মাঠেই বিচরণ করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক; আওয়ামী লীগের বড় অংশের সমর্থন নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার।
প্রার্থী হিসেবে প্রথম হলেও রাজনৈতিকভাবে এবং সামাজিক সংগঠনে কাজের সূত্রে জনগণের সঙ্গে সবসময় ‘সম্পৃক্ত’ থাকার কথাই বলছেন সূচনা।
ভোটের প্রচারের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “সাড়া খুবই ভালো পাচ্ছি। আমি রাজনৈতিকভাবেও জনসম্পৃক্ত। আমাদের যে দলের কাজ আছে, সেটার মধ্য দিয়েও আমরা মানুষের জন্য কাজ করি।
“আমার যে সামাজিক সংগঠন আছে, সেভাবেও আমি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য আমি ‘অতিথি পাখির’ মত আসিনি হঠাৎ করে নির্বাচনের সময়।”
মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে শনিবার ভোট দেবেন নগরবাসী।
নির্বাচনে বাস প্রতীকে সূচনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নগরীতে দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু; বিএনপির বহিষ্কৃত এই নেতার প্রতীক টেবিল ঘড়ি।
তাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে আরও আছেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।
চিকিৎসক সূচনা কুমিল্লায় কাজ করা ‘জাগ্রত মানবিকতা’ নামক সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক।
তার বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের দুইবার হওয়া কমিটিরই সভাপতি এবং কুমিল্লা সদর থেকে মোট চারবারের সংসদ সদস্য।
২০১২ সালে কুমিল্লা সিটির করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে দাঁড়িয়ে নগরপিতা নির্বাচিত হন সাক্কু। সেবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আফজল খানকে বেশ বড় ব্যবধানে হারান।
২০১৭ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু।
তবে, আফজল খান পরিবারের কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার মধ্যে ২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের কাছে হেরে যান সাক্কু। বাহারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাক্কুর চেয়ে মাত্র ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
রিফাত ছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়র। ওই বছরের ৭ জুলাই তিনি মেয়রের দায়িত্ব নেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর পর মেয়র পদ শূন্য হয়।
নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া তাহসিন বাহার সূচনা বুধবার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাগিচাগাঁও এলাকায় জনসংযোগের ফাঁকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রশ্ন: আপনি প্রার্থী হিসেবে এবার প্রথম ভোটের মাঠে নেমেছেন। ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সূচনা: প্রার্থী হিসেবে আমি প্রথম হলেও বিগত নির্বাচন, আমার বাবার নির্বাচন আমি করেছি। গত যে সিটি নির্বাচন হল সেখানে আমি নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশিই ছিলাম। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, আমাদের অনেক অঙ্গ সংগঠন, আমি সবার প্রার্থী। আমরা সবাই মিলে এই নির্বাচনটা করছি এবং আমি বিশ্বাস করি, আমি আসলে শুধু তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমার যদি বিজয় হয় ইনশাআল্লাহ, সেটা মহানগর আওয়ামী লীগের বিজয় হবে।
আর সাড়া খুবই ভালো পাচ্ছি। আমি রাজনৈতিকভাবেও জনসম্পৃক্ত। আমাদের যে দলের কাজ আছে, সেটার মধ্য দিয়েও আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আমার যে সামাজিক সংগঠন আছে, সেভাবেও আমি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য আমি ‘অতিথি পাখির’ মতো আসিনি হঠাৎ করে নির্বাচনের সময়। আমি ভালো সম্পৃক্ত দেখেই মানুষও আমাকে খুব ভালো সাড়া দিচ্ছেন।
প্রশ্ন: মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম কোন কাজটাকে গুরুত্ব দেবেন?
সূচনা: আসলে আমাদের কুমিল্লা ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হলেও আমরা যে মৌলিক অধিকারগুলো আছে, যে নাগরিক সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো থেকে বঞ্চিত। অবশ্যই কিছু স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সবগুলো সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তো, যেখানে আমি যাচ্ছি, সেখানে দেখছি যে, সেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা বলে জলাবদ্ধতা, যেটা অবশ্যই একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কারণ, আমরা জানি যে, আজকে জলাবদ্ধতার কারণই হচ্ছে অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এ ছাড়া, আমাদের মশা এবং যানজটের বিষয়টা, জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা। সেটা আমরা হয়ত স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায়, যারা সংশ্লিষ্ট আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধান করতে পারব।
প্রশ্ন: পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এবার এখানে শুধু মেয়র পদে উপনির্বাচন হচ্ছে। ভোটারের উপস্থিতিতে সেটা কি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
সূচনা: না, ভোটার উপস্থিতিতে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, কুমিল্লাতে আপনারা সব জায়গায় দেখছেন যে, একটা উৎসবমুখর পরিবেশ হিসেবে জনগণ নির্বাচনটাকে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের উপস্থিতি না থাকলেও ভোটারদের যথেষ্ট পরিমাণ সাড়া আমরা পাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে আরও তিন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। আপনি কাকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন?
সূচনা: আমি কাউকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। কারণ আসলে আমি বিশ্বাস করি, মানুষ এখন অনেক সচেতন। আপনার সুখে-দুঃখে, লড়াই-সংগ্রামে আপনি রাজপথে যাকে পাবেন, মানুষরা যাকে পাচ্ছে তাদেরকে মানুষ ভোট দেবে। বিগত দিনে যিনি ছিলেন, উনার সমস্যাগুলোর কারণেই কিন্তু মানুষ আসলে আমাদের কাছে প্রতিকার চাচ্ছে।
আর বাকি যে দুজন নতুন আসছে, উনারা আসলে মৌসুমে-মৌসুমে আসেন, কোভিডের সময়ে উনাদের পাওয়া যায় না, যখন কারও রক্তের প্রয়োজন হয় পাওয়া যায় না, যখন শীতে মানুষের কম্বলের প্রয়োজন হয়, তখন পাওয়া না, ঈদে-চাঁদে মানুষকে জাকাত দিতেও দেখা যায় না- তাদেরকে আসলে আমি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না।
প্রশ্ন: এখানে বিএনপিপন্থি দুজন প্রার্থী আছেন। বিএনপির ভোট ভাগ হবে। এটা কি আপনাকে ভোটের মাঠে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে?
সূচনা: না, সে রকম কিছু আসলে আমি মনে করি না। কারণ, একদম পুরোপুরি আলাদা। বিএনপি শুধু মুখে বলে নির্বাচন বর্জন করছে, কিন্তু বরাবরই তারা যখনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী, কিছুদিন আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কিন্তু যিনি নৌকার বিরোধী প্রার্থী ছিলেন, তার পক্ষে বিএনপি খুব সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিল। তারপরও রেজাল্ট ছিল ৯০ হাজারের তফাৎ। তো, আমি মনে করি না, সেটা আমার জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে।
প্রশ্ন: আপনার দল আওয়ামী লীগের আরেকজন নেতা প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। তার পক্ষেও ভোট যাবে। তিনি আপনার ভোটের ফলাফলে কী প্রভাব ফেলতে পারেন?
সূচনা: মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আমি। আর যিনি আরেকজন আছেন, এর আগে উনার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছিল। এবার দোয়া করি, জামানত থেকে ইজ্জতটা বাঁচাক।
প্রশ্ন: ভোটের এই ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সূচনা: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।