সকালে দাফনের কথা থাকলেও ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় সময় পিছিয়ে দুপুর ২টায় করা হয়।
Published : 10 Apr 2025, 09:46 PM
সকালে এসএসসি পরীক্ষা। আগের দিন মধ্যরাতে নাহিদ হোসেনের বাবা আক্তার হোসেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদ বাবার লাশ বাড়ি রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার লাশ কাঁধে নিয়ে দাফনে শামিল হয় নাহিদ। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
দুপুরে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে নিজ গ্রাম বড় হাড়গিলায় গিয়ে বাবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করে নাহিদ। সে এ বছর স্থানীয় মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বুধবার রাত দেড়টায় নাহিদের বাবা আক্তার হোসেন (৪৫) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সকালে দাফনের সম্ভাবনা থাকলেও ছেলে এসএসসি পরীক্ষার হলে যাওয়ায় দাফনের সময় পিছিয়ে দুপুর ২টায় নেওয়া হয়।
হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ইলিয়াছ কাঞ্চন বলেন, “প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা ছিল। আমাদের কেন্দ্রে ৫৮৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮০ জন অংশগ্রহণ করেছে। ছয়জন ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল।
“ছাত্রদের মধ্যে নাহিদ নামের এক পরীক্ষার্থীর বাবার মৃত্যুর পরও লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা হলে এসেছে। শুনেছি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছে।”
এসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ বলে, “আমার বাবা চার মাস ধরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত। ঋণ করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসার চেষ্টা করেছি। মঙ্গলবার বিকালে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে বাবাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।
“বুধবার সকাল থেকে আমি বাড়িতে থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু রাত দেড়টায় বাবার মৃত্যুর খবর পাই। এরপর থেকে আর পড়তে পারিনি।”
কান্নাজনিত কণ্ঠে সে বলে, “সকালে বাবার নিথর দেহ বাড়ির উঠোনে রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। পরীক্ষার হলে বসেও বাবাকেই ভাবছিলাম। কিছু লিখতে গেলেই খাতা দেখা যায় না, সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ চোখে ভাসছিল। তারপরও কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
“পরিবারে আমার মা রয়েছে। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। আমার ছোট ভাইটি মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবাহীন একটি অসচ্ছল পরিবার কীভাবে সামনে পথ চলবে সেটাই ভাবছি। সবাই আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।”
মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে নাহিদ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। রাতে তারা বাবা মারা যান। ছেলের পরীক্ষা থাকায় তা পিছিয়ে দুপুরে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
নাহিদের বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।