সর্বনিম্ন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুরে সকাল থেকে আন্দোলনে নামেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়িতে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে নগরীর কোনাবাড়ি বিসিক এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বলে গাজীপুর-২ শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান।
শ্রমিকরা কারখানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবের একাধিক টহল টিম কাজ করে।
পুলিশ জানায়, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করে সরকার।
সেই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। সকাল ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা-শিববাড়ি সড়কে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়।
এর কিছু সময় পর মহানগরীর বাসন থানা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে কাঠ, গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়। দুপুরের খাবার পর্যন্ত শ্রমিকরা শান্ত থাকে এবং পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
দুপুরের খাবারের বিরতির পর থেকেই শ্রমিকরা ফের আন্দোলন শুরু করেন। প্রথমে কোনাবাড়ি বিসিক এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নামেন। পরে মিছিল করতে করতে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিলে উত্তেজিত শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তুসুকা গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকাল ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. ইয়াসির আরাফাত হোসেন বলেন, “শ্রমিকদের প্রথমে আমরা শান্ত থাকতে অনুরোধ করি। তারা অনুরোধ উপেক্ষা করে সড়কে নেমে নাশকতামূলক কার্যক্রম শুরু করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।”
বিকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে; এ মুহূর্তে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গাজীপুর-২ শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, সকালে কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় কিছু শ্রমিক সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাহার করে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে অবরোধের চেষ্টা করে। পরে তাদের বুঝিয়ে এলাকা থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
“কিন্তু দুপুরের পর কোনাবাড়ি এলাকায় তুসুকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ভেতরে একই দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে বিকাল ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
শিল্প পুলিশের এসপি আরও বলেন, “তবে চলমান পরিস্থিতিতে কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় 'নো ওয়ার্ক নো পে' ভিত্তিতে ১২টি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার তথ্য আছে আমাদের কাছে।”
আরও পড়ুন: