ট্রাকচাপায় নিহত রত্নার নবজাতকের ক্ষতিপূরণের ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে

সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও দুই সন্তানের সহায়তা হিসাবে’ এই টাকা জমা আছে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2022, 04:23 PM
Updated : 27 Oct 2022, 04:23 PM

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর সময় জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা আছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।  

সোনালী ব্যাংক ত্রিশাল শাখায় ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও দুই সন্তানের সহায়তা হিসাবে’ এই টাকা জমা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘ডিসি ময়মনসিংহ’ ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এই তথ্য জানান জেলা প্রশাসক।

গত ১৬ জুলাই ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় ত্রিশালের রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না আক্তার রহিমা (৩০) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন (৬) মারা যায়। মৃত্যুর আগে সড়কেই রত্নার এক মেয়ের জন্ম হয়। 

ফেইসবুক পোস্টে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, ট্রাস্টি বোর্ড, বিআরটিএ তহবিল হতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পিতা-মাতার নবজাতক শিশুর অভিভাবককে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত ৫ (পাচ লাখ) টাকার ক্রস চেকে সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখায় ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও অপর দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব’-এ জমা আছে। 

এতে আরও বলা হয়, এই টাকার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যক্তির দেওয়া টাকাও ওই একাউন্টে জমা হচ্ছে। একাউন্ট নম্বর ৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখা। এই একাউন্ট পরিচালনা করছেন শিশুর অভিভাবক দাদা ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

‘এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে ওই পোস্টে বলা হয়, যৌক্তিক প্রয়োজনে শিশু ও তার পরিবারের কল্যাণের জন্য এই একাউন্ট থেকে খরচ করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ফেইসবুক পোস্ট দেওয়া হয়নি। ওই শিশুর টাকা কোথায় আছে, তা মানুষককে জানানোর জন্য দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আদালতের কোনো কপি এখনও পাননি তিনি।

এ ঘটনায় করা একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে।

বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে সড়কে জন্ম নেওয়া ওই শিশুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে কি না জানাতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত।

গত ১৯ জুলাই শিশুটির চিকিৎসা ও কল্যাণে তার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে শিশুটির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর অধীনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়।

গত ১৬ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে ত্রিশালে এসেছিলেন। সঙ্গে তাদের মেয়ে সানজিদাও ছিল।

ওইদিন ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না আক্তার রহিমা এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন মারা যায়। মৃত্যুর আগে সড়কে রত্নার এক মেয়ের জন্ম হয়।

ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ১৭ জুলাই ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন। রত্নার রেখে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছিল একটি বেসরকারি হাসপাতাল। কয়েকদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর গত ১৯ জুলাই শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২৯ জুলাই শিশুটির দাদা বাবলু ও অন্য স্বজনরা রাজধানীর আজিমপুরে শিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাসে রেখে যান নবজাতক ফাতেমাকে।

আরও পড়ুন

Also Read: ত্রিশালের সেই শিশুটির ঠাঁই হচ্ছে ছোটমণি নিবাসে

Also Read: ময়মনসিংহের সেই নবজাতক ‘প্রায় সুস্থ’, ছাড়পত্র শিগগির

Also Read: ময়মনসিংহের সেই নবজাতকের শারীরিক ‘অবস্থা উন্নতির দিকে’

Also Read: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় ৩ মৃত্যু:  চালক দুই দিনের রিমান্ডে

Also Read: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় ৩ মৃত্যু: সেই চালক গ্রেপ্তার

Also Read: ট্রাক চাপায় তিন নিহতে মামলা, চিকিৎসাধীন নবজাতক

Also Read: সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই শিশুকে লালনপালন করবেন দাদা-দাদি

Also Read: সড়কে ঝরল ৩ প্রাণ: ট্রাকচাপায় মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সন্তানের জন্ম

Also Read: ময়মনসিংহে ট্রাক চাপায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যু