সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই শিশুকে লালনপালন করবেন দাদা-দাদি

কষ্ট হলেও ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়কে ভূমিষ্ঠ হওয়া সেই নবজাতককে তার প্রতিবন্ধী দাদা-দাদি লালনপালন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এজন্য তারা সরকার ও বিত্তবানদের সহায়তা চান।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2022, 12:57 PM
Updated : 17 July 2022, 12:57 PM

রোববার ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি ফকির বাড়িতে এই নবজাতকের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও দাদি সুফিয়া আক্তারে সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির। 

শনিবার দুপুরে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের মেয়ে সানজিদা (৬)।

ওই দুর্ঘটনার সময়ই এই মেয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। পুলিশ ও আশপাশের লোকজন নবজাতককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর শিশুটি জীবিত আছে বলে জানা যায়।

তার ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে, এক ব্যবসায়ী এই শিশুর লেখাপাড়া, চিকিৎসাসক সব খরচ বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।

এই নবজাতকের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও দাদি সুফিয়া আক্তার – দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের আরেক ছেলে ২০০৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

শনিবার রাতে জানাজা শেষে উপজেলার রায়মণি এলাকার নিজ বাড়িতে ঘরের পাশে রত্না বেগম, জাহাঙ্গীর আলম এবং তাদের মেয়ে সানজিদাকে তাদের দাফন করা হয়।

রোববার সকালে রায়মণি ফকির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পেছনে একসাথে নতুন তিনটি কবর। যেখানে শায়িত আছে দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না আক্তার ও মেয়ে সানজিদা আক্তার। তাদের কবরের পাশে বসেই বিলাপ করছিলেন জাহাঙ্গীরের মা সুফিয়া আক্তার। আর বাকরুদ্ধ বাবা মোস্তাফিজুর রহমান।

বাবা-মা-বোনকে খুঁজছেন জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত।

নতুন শিশুর আগমনে এই বাড়িতে থাকার কথা ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু; আনন্দের সময়টাকে পরিণত করেছে বিষাদে। এমন ঘটনায় শোকে স্তব্ধ শুধু রায়মণি গ্রামই নয় শোকের ছায়া নেমে পুরো ত্রিশাল উপজেলাজুড়ে।

নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার

জানান, ২০০৪ সালে তাদের ছোট ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এবার বড় ছেলে, তার স্ত্রী ও নাতনীকে সড়কে প্রাণ দিতে হয়েছে। এত কষ্ট কাটিয়ে ওঠার না।

সবাই নবজাতকের খোঁজ-খবর নিলেও কেউ বাকি দুই সন্তানদের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নবজাতককে তারা লালনপালন করবেন। তবে অন্য দুজনসহ ছেলের সব সন্তানদের লালনপালনে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে।

এ জন্য তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন।

শনিবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে নবজাতককে দেখে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামূল হক বলেন, একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সবাই মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে নবজাতকটি। তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার জেলা প্রশাসন থেকে করা হবে। যেকোনো প্রয়োজনে শিশুটির পাশে থাকা হবে।

বাংলাদেশ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, নবজাতকটি পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।

“তার ডান হাতের দুই জায়গায় হাড় ভেঙে গেছে। তবে এটি বড় ধরনের কোনো ক্ষত না। সার্বক্ষণিক শিশুটিকে চিকিৎসার মধ্যে রাখা হয়েছে।”

লাবীব হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “ত্রিশালে দুর্ঘটনার পর সেখান থেকে খবর পেয়ে শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর আমার পুর্ব পরিচিত। তাই শিশুটিকে আমার হেফাজতে রেখেছি।”

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী শিশুটির সমস্ত খরচ বহন করছেন। শিশুটি যতদিন না নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ততদিন পর্যন্ত তার পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ সমস্ত খরচ ওই ব্যক্তি দেবেন।

আরও পড়ুন