“এখন তো অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকার। এখন তো খাল খনন ও উদ্ধার কার্যক্রম করা খুব সহজ।”
Published : 07 Feb 2025, 09:29 AM
কয়েক বছর ধরে ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরাট হওয়ায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে মাদারীপুর পৌর শহরের ‘ভুঁইয়ার মাঠ’ খালটি ।ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের দাবি, এই শীত মৌসুম থাকতে থাকতেই খালটি খনন করে বর্ষায় নির্বিঘ্নে পানি চলাচল করার ব্যবস্থা করা। এতে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকার বলরামদেব মন্দির থেকে একটু উত্তরে অবস্থিত আমিরাবাদ জামে মসজিদ ভবনের নিচ থেকে উত্তর পাশে এবং শামসুননাহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে অবস্থিত ‘ভূইয়ার মাঠের’ ভেতর দিয়ে প্রায় আটশ ফুট দৈর্ঘ্যের ছোট একটি খাল রয়েছে।
খালটির পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ফার্নিচার কারখানা। এই কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে পুরো খালটির নাব্যতা কমে ভরাট হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থান। গভীরতা আগের মতন না থাকায় সারাবছর এই খাল দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকে।
তবে বর্ষা মৌসুম এলে চারপাশের পানি এসে এখানে পড়ায় খালটির পানি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এতে এই এলাকার মানুষেরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
খালের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় সারা বছরই এডিস মশার লার্ভা থেকে মশার উৎপাদন হতেই থাকে। এতে এলাকার মানুষেরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়েন। তাই স্থানীয়রা কর্তৃপক্ষের কাছে এই খালটি নতুন করে খনন করে সারা বছরই পানি চলাচলের ব্যবস্থার দাবি করছেন।
আমিরাবাদ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হোসেন বলেন, “আমিরাবাদ মসজিদ থেকে উত্তর দিকে বয়ে যাওয়া খালটির পাশে অনেকগুলো ফার্নিচারের কারখানা তৈরি হয়েছে। ওই দোকানের কাঠের গুড়িগুলো এখানে নিয়মিত ফেলা হয়। যার কারণে খালের এক পাশের মুখ ভরাট হয়ে গেছে। এখন আর খালে পানি চলাচল করে না। এই খালটি বেশি বড় নয়। সর্বোচ্চ আটশ থেকে নয়শ ফুট হতে পারে।
“এই খালটি যদি কর্তৃপক্ষ নতুন করে খনন করে দুই পাড় বেঁধে দেয়। তাহলে সারাবছরই পানি প্রবাহ থাকবে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরের ব্যবহৃত ময়লা পানিও ফেলতে পারবে। নাগরিক জীবনযাপনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।”
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা অসীম দাস বলেন, “আগে তো দেখতাম এই খালটি দিয়ে সারা বছরই পানি নামত। এখন পানি বের হওয়ার সিস্টেম নেই। তাছাড়া পানি বের না হওয়ার কারণে সারা বছরই এই খালে এডিশ মশার লার্ভা থাকে।
তিনি বলেন, “বর্ষার সময়ে এই এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারও শুনেছি অনেকেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই এই ‘ভূইয়ার মাঠ’ খালটি খনন করা জরুরি।”
এই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ নজরুল ইসলাম বলেন, “আগে দলীয় সরকার ক্ষমতায় ছিল। তখন তো খাল খনন করতে গেলেই বাঁধা আসত। এখন তো অন্তবর্তীকালীন ইউনূস সরকার। এখন তো কর্তৃপক্ষের খাল খনন ও উদ্ধার কার্যক্রম করা খুব সহজ।
“এখন যদি এসব খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করা না হয়। তাহলে আর কোনোদিনই করা সম্ভব হবে না।”
শুধু এই এলাকার নয় আরও অনেক এলাকার মানুষজন কর্তৃপক্ষের কাছে এই খালটি খনন ও উদ্ধার নিয়ে দাবি জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, “আমিরাবাদ এলাকার শামসুননাহার বালিকা বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের ‘ভূইয়া মাঠ’ খালটিতে এখন আগের মতন নাব্যতা নেই। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
“এখন এই খালটি নতুন করে খনন করে দুই পাশে ভালো করে পাড় বেঁধে দিলে এখানে সারা বছরই পানি চলাচল করতে পারবে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা খালটি ব্যবহার করে যেমন নাগরিক সুবিধা পাবে। তেমনই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকেও মুক্তি পাবে। মশার উৎপাদনও বন্ধ হবে।”
তাই জরুরি ভিত্তিতে খনন করে খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, “এর মধ্যে আমরা খালটি দেখে এসেছি। খালটি দিয়ে যাতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে এবং পৌরবাসী খালটির সুফল পেতে পারে সেই ধরনের উদ্যোগ আমরা খুব শীঘ্রই গ্রহণ করব।”