রাজধানী ঢাকার লাগোয়া এ মহানগরীতে মেয়র ও কাউন্সিলর বেছে নিতে বৃহস্পতিবার ভোট দেবেন ভোটাররা; মঙ্গলবার শেষ প্রচারের দিনে সরগরম পুরো নগরী।
Published : 23 May 2023, 11:58 PM
ভোটের পোস্টার-ডিজিটাল ব্যানারে আগে থেকে ছেয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন সড়ক, আনাচে কানাচে সবখানেই নির্বাচনী ডামাডোল; চারিদিকে চোখ বুলালেই প্রতীকের ছবির ছড়াছড়ি, যার মধ্যে প্রার্থীদের শেষ প্রচারণা আর মাইকিংয়ে দিনভর সরগরম পুরো গাজীপুর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আশাবাদ আর ভোটের পরিবেশ নিয়ে তার প্রধান বিরোধী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর শঙ্কার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা।
রাজধানী ঢাকার লাগোয়া এ মহানগরীতে মেয়র ও কাউন্সিলর বেছে নিতে বৃহস্পতিবার ভোট দেবেন ভোটাররা।
মঙ্গলবার শেষ দিনের প্রচার আর গণসংযোগের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের দেখা গেছে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাতে। দিনের পুরোটা সময়ই ভোট চেয়ে প্রতীকের পরিচিতি জানিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে হয়েছে মাইকিং।
পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া গাজীপুরে আট মেয়রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রাধান্য ছিল বেশি, তার সঙ্গে কাউন্সিল প্রার্থীরা ছিলেন সমানে সমান।
প্রচারের শেষ দিনে ভোটারদের উপস্থিতি ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তবে এদিন অন্য প্রার্থীরা যখন ব্যস্ত ছিলেন গণসংযোগে, তিনি বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে।
প্রচারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যস্ততা ছিল চার দেয়ালের ভেতরে; তবে নেতাকর্মীরা ভোট চেয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন নগরীর অলিগলিতে।
অন্য মেয়র প্রার্থীরা শেষ দিনে গণসংযোগে নেমেছেন; শেষবারের মতো ভোটারদের কাছে গেছেন ভোট প্রার্থনার জন্য।
শেষ প্রচারে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে ছুটে বেড়ানো সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা- স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলামের (রনি সরকার) মুখে থেকে এসেছে শঙ্কার কথা।
বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে দলটির কর্মী রনি সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, প্রতীক পেয়েছেন হাতি।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জায়েদা, যার পেছনে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে রয়েছেন তার ছেলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর।
এবারও নৌকা প্রতীকে লড়ার জন্য মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের জামিনদার হওয়ার অভিযোগে তা আটকে গেলে এখন মাকে জেতাতে তৎপর তিনি।
মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো বহিষ্কৃত হয়েছেন জাহাঙ্গীর; মায়ের নির্বাচনী প্রচারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলা ও বাধার অভিযোগ করে আসছেন তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দেবেন পৌনে ১২ লাখের বেশি ভোটার। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪৮০টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
পাঁচ রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটের মাঠে আছেন আরও তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের সঙ্গে ৫৭টি ওয়ার্ডে ২৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৯ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনও ভোটের জন্য প্রস্তুতির কাজ চালাচ্ছে জোরেশোরে। প্রার্থীদের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এজেন্ট ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব বিষয়ে প্রার্থীরা আমার কাছে লিখিত বা মৌখিক, কোনোভাবে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আমি সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।”
ভোটার উপস্থিতি, জয় নিয়ে আশাবাদী আজমত
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম ও নির্দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ব্যর্থ হলেও এবার নৌকা প্রতীকে ফসল ঘরে তোলার বিষয়ে আশাবাদী আজমত উল্লা খান।
অন্য প্রার্থীদের মুখে পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা শোনা গেলেও তিনি নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ হবে এবং তাতে ভোটার উপস্থিতিও ‘আশানুরূপ’ থাকবে বলে মনে করছেন।
নির্বাচনী প্রচারের শেষদিন মঙ্গলবার সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে।
“এবং আপনারা লক্ষ্য করছেন যে, নির্বাচনে মানুষ তাদের মনের মতো প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছে এবং ভোটার উপস্থিতি অবশ্যই আশানুরূপ হবে।”
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম ও নির্দলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে ভোটের মাঠে নামলেও ফল ঘরে তুলতে পারেননি গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আজমত উল্লা।
সেই সময়ে তার বিপরীতে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্যালটে তার নাম থেকে যায়। ওই ভোটে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে আজমত উল্লার পরাজয়ের পেছনে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা ও বিরোধিতাকে কারণ হিসেবে ধরা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে নৌকার টিকেট দেয় আওয়ামী লীগ; ধানের শীষে বিএনপির প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারকে হারিয়ে নগর ভবনে নৌকা ভেড়ান জাহাঙ্গীর।
এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা আটকে যায়; কিন্তু মা জায়েদা খাতুনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধেই তৎপর তিনি।
অন্যদিকে বিএনপির বর্জনের মধ্যে দলের কর্মী এবং আগের নির্বাচনে দলের প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা রনি সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।
রনি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্যে জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যার মামলায় নুরুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তবে কারান্তরীণ এই নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায় এখনও কার্যকর হয়নি।
এই নুরুল ইসলামকে হারিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রথমবার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা। সর্বশেষ কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালে নির্বাচন করেও নুরুল ইসলাম পরাজিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হলে নুরুল ইসলামের ছেলের হাতি মার্কা এবং জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ির বাধা টপকাতে হবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতকে। তবে আশাবাদী তিনি। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “আশাব্যঞ্জক সাড়া আমরা পাচ্ছি।
“আমরা আশা করি যে, আগামী পরশু দিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনে মানুষের দীর্ঘদিনের যে আশা আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের মাঠে যে অবস্থা বিরাজমান, মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে, যেভাবে তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছে, সুতরাং ইনশা আল্লাহ, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
পরিস্থিতি ‘উত্তপ্ত’ হতে দেখছেন রনি সরকার
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী রনির।
ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিনে গণসংযোগকালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন দিন আগেও যে পরিস্থিতি ছিল, এখন কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতো নাই। নৌকার প্রার্থীরা যে কেন্দ্র দখল করবে, তারই একটা পাঁয়তারা মনে হয় চলছে, গত তিন দিন ধরে।
“আগে নির্বাচনের পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল বলতে পারি, দিন যত ঘনাচ্ছে, দিন যত পার হচ্ছে, পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হচ্ছে আর কি।”
গণসংযোগের মধ্যেই এদিন সকালে টঙ্গী বাজার এলাকার বাসায় নির্বাচনের ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন রনি সরকার।
নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে জনবান্ধব, শিল্প বান্ধব, যানজট মুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতা মুক্ত, সু-পরিকল্পিত আবাসনের নগরী হিসেবে গড়ার কথা আশা দেখাচ্ছেন তিনি।
এরপর গণসংযোগে নেমে টঙ্গী পশ্চিম থানার কলাবাগান বস্তিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ করেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চান তিনি।
এজেন্ট দিতে বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ করে হাতি মার্কার প্রার্থী বলেন, “আমাদের এজেন্ট দেওয়ার ব্যাপারে আমরা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এজেন্টরা ভয় পাচ্ছে।
“এবং আমরা নিজেরাইতো এখন শঙ্কিত, নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে, সেই ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি সন্দেহ প্রকাশ করছি।”
৫৭ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রের জন্য এজেন্ট ঠিক করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত কাগজপত্রও রেডি আছে। আমরা প্রত্যেকটি কেন্দ্রে এজেন্ট মোটামুটি সুন্দরভাবে দিতে পারছি।
“কিন্তু একজনকে যদি এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে যেহেতু নির্বাচন একটি দলীয় সরকারের অধীনে হচ্ছে, মানুষ ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক।”
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার কথা জানিয়ে রনি সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কথা তুলে ধরেন।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “দলের তৃণমূলের যারা আছে, দলের সমর্থক যারা আছে, তাদের সকলের সমর্থন আমরা ব্যাপকভাবে পাচ্ছি। কিন্তু এখন আপনারা জানেন, বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ফলে মানুষের মধ্যে ভয়ের জায়গা, একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
“সেজন্য আমরা বারবার বলছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে এজেন্ট দেওয়া চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেক্ষেত্রে যদি মানুষ ভয় পায়, সেটায় আমাদের জন্য বেশ কষ্ট হচ্ছে আর কি।”
ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি জানান, হাতি প্রতীকের এজেন্ট থাকতে না দিলে নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা সাধারণ মানুষকে নিজের পক্ষে ভোটের বোতামে চাপতে বাধ্য করতে পারে।
ভোটারদের ‘নিরাপত্তা’ চান জাহাঙ্গীরের মা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ভোটার ও এজেন্টদের নিরাপত্তা চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।
মঙ্গলবার নিজের ছয়দানা এলাকার বাসায় নয় দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন জায়েদা খাতুন।
নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের আগামী ৫ বছর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার পাশাপাশি ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাষ্টার প্লান অনুযায়ী তার সকল অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা চাই। আমার (টেবিল) ঘড়ি মার্কায় ভোট চাই, ভোটের নিরাপত্তা চাই।”
ছেলের মতো মেয়র হতে ভোটের মাঠে নেমেছেন ৭০ বছর বয়সী এই নারী; যার নির্বাচন দেখভাল করছেন তার ছেলে জাহাঙ্গীরই। জায়েদার পক্ষে ইশতেহারও পড়ে শোনান তিনি।
জায়েদার কয়েকটি বাক্য বলার আগে পুরো সময় জাহাঙ্গীর আলমই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আমার মা বলেছেন- আমার সন্তান এবং আমার জন্মভূমি গাজীপুরের উপর বিগত ১৮ মাস যাবত অত্যাচার করা হয়েছে। এবং এর প্রতিবাদে আমার মা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং আগামী ২৫ তারিখের জন্য সকল কর্মসূচি তৈরি করেছেন।”
টেবিল ঘড়ির মার্কার সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে, তারা সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোটটা করার জন্য সহযোগিতা করবে। কিন্তু সেটা না করে, আমাদের যারা সাপোর্ট করে, মাকে সাপোর্ট করে তাদেরকে রাতে-দিনে প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে।
অনেককে গাজীপুর থেকে ধরে নিয়ে সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে মাদক ও অন্যান্য মামলা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর। ভোটের পরিবেশ এমন হতে পারে না বলেও দাবি তার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “দয়া করে আমাদের সদস্যদের ছেড়ে দেন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করুন। না হয়, নির্বাচনের নামে একটা তামাশা হবে। আমরা তামাশা চাই না, আমরা নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।”
জায়েদাকে উদ্ধৃত করে জাহাঙ্গীর বলেন, “যেহেতু সংগ্রামী জীবন, আমার মা বলেছেন, সর্বশেষ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে রক্ষার জন্য, এই এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে চাই। ২৫ তারিখ সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন। অনুরোধ করেছেন মা, যেন সকালে এসে সকালে ভোটটা দেয়।”
তিন মেয়র প্রার্থীর শেষ দিনের প্রচার
তফশিল অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ১২টায় গাজীপুর সিটি ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে। বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় আর কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তুতির কাজ চলবে।
তৃতীয়বারের এই সিটি ভোটে প্রচার-প্রচারণা আর গণসংযোগ গত ১৫ দিন জমজমাট ছিল পুরো গাজীপুর মহানগরী; বিভিন্ন স্থানে অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুনের গণসংযোগে হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
শেষ প্রচারের দিন মঙ্গলবার সকালে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আজমত উল্লা খান। এরপর আবার বাসায় ফিরে যান।
আজমত উল্লা খানের নির্বাচনি প্রচার টিমের এক সদস্য জানিয়েছেন, শেষদিন মাঠে গণসংযোগে সেভাবে বের না হলেও বিভিন্ন স্থান নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করেছেন নৌকার প্রার্থী।
বাসার বাইরে গাজীপুর ক্লাব, চান্দনা চৌরাস্তা বাসন থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
সকালে ইশতেহার ঘোষণার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাসায় কিছু সময় কাটান স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। এরপর বিকালে মহানগরীর ছয়দানা, তেলিপাড়া, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে গণসংযোগে বের হন তিনি।
সকালে টঙ্গী বাজারের বাসায় নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার পর দুপুরে টঙ্গী পশ্চিম থানার কাঁঠালদিয়া শেষদিনের গণসংযোগ শুরু করেন রনি। এর মধ্যে পশ্চিম থানা এলাকার কলাবাগান বস্তিতে ঢুকতে গিয়ে নৌকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর চেরাগ আলী, দেওড়া, তিলার গাতি, সাতাইশসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে মাঠের প্রচারণা শেষ করেন তিনি।