“বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই।“
Published : 30 Nov 2022, 09:17 PM
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিভাগের আট জেলা পরিবহন ধর্মঘটে যাচ্ছে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বুধবার বিকেলে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুগ কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
শনিবার রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তার দুদিন আগ থেকে এই ধর্মঘটকে দলটির নেতারা সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন।
গত শনিবার নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভায় ১০ দফা দাবি আদায়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর তারা বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে তাদের দাবি পূরণে স্মারকলিপি দেয়।
সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, “মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধর্মঘটের আওতায় থাকবে সব যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন। তবে এরই মধ্যে যদি দাবির পক্ষে আশ্বাস পাওয়া যায় তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।”
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ যা স্থানীয়ভাবে ‘মাদ্রাসা মাঠ’ নামে পরিচিত সেটি ব্যবহারের জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়। বুধবার সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয় মহানগর পুলিশ।
বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এসব গণসমাবেশের আগে অধিকাংশ স্থানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে ধর্মঘট আহ্বান করছেন।
এতে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে পারছেন না কিংবা ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। দলটি বলছে, তাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অনেক স্থানেই দেখা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা এক-দুদিন আগেই সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হন। সেখানে মাঠেই তারা রাত্রিযাপন করেন এবং সমাবেশ শেষ করে ফিরে যান।
রাজশাহীতেও সমাবেশে দুদিন আগে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা এল।
এ ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ কমিটির সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, “সমাবেশে যেন নেতাকর্মীরা আসতে না পারে সেজন্য রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ধর্মঘট দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে রাখা যাবে না। যে কোনো মূল্যে এই গণসমাবেশ সফল করা হবে।”
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বলেন, “বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি ‘কাকতালীয়’। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের এই কর্মসূচির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।“
পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে। ২. হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৩. জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে। ৪. কোভিডকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ে ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। ৫. সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ৬. চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৭. পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৮. উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ৯. মহাসড়কে হাট-বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। ১০. যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
রাজশাহীতে গণসমাবেশের আগে গ্রেপ্তারের অভিযোগ বিএনপির
১১ দাবি না মানলে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট