“আলামিনই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার রোজগারেই সংসার চলত।”
Published : 16 Feb 2024, 09:07 PM
ঘরে খাবার নেই। তাই সকালে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আলামিন। বলে এসেছিলেন, বাজার করে বাড়ি ফিরে স্ত্রী-সন্তান আর বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে দুপুরে খাবেন।
সে কথা রাখতে পারেননি আলামিন; বেপরোয়া দ্রুত গতির বাস পরিবারের কাছ থেকে তাকে দূরে নিয়ে গেছে চিরদিনের মত। ঘরে ফেরার বদলে তার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মর্গে।
নিহত আলামিন ফুলপুর উপজেলার ভিউ পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাহের উদ্দিন ও আনিছা খাতুনের ছেলে। তিনি পরিবারের সঙ্গে উপজেলার বালিয়া মোড়ে একটি রুমে ভাড়া থাকতেন।
আলামিনের ছয় বছর বয়সি লামিয়া ও তিন বছর বয়সি মোবারক নামে দুটি সন্তান রয়েছে।
‘অটোরিকশাটি একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে বাসের সামনে পড়ে’
ময়মনসিংহে বাসচাপায় প্রাণ হারানো বাবুলের তিন সন্তান এখন ‘অথৈ সাগরে’
শুক্রবার বিকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন আলামিনের ৬০ বছর বয়সী মা আনিছা খাতুন। তার পাশে ছিলেন মেয়ে উম্মে কুলসুম। ভাইয়ের মৃত্যু শোকে তিনি ও পাগলপ্রায়।
আনিছা বলেন, “আমার কোন বসত ভিটা নেই। স্বামী অসুস্থ হয়ে অনেকদিন ধরে বিছানায় পড়ে আছে। আলামিনই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার রোজগারেই সংসার চলত।”
এ কথাগুলো বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, “আমার ছেলে কই গেল। এখন সংসারের বাজার কে করবে, কে আমাদের দেখব। আল্লাহ গো তুমি আমার ছেলেরে ফিরাইয়া দেও।”
দুর্ঘটনার খবর শুনে দুর্ঘটনাস্থল আলালপুর গিয়ে কাদঁতে কাঁদতে জ্ঞান হারান আলামিনের স্ত্রী হালিমা খাতুন। তখন স্থানীয়রা তার মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।
হালিমা বলেন, “অভাবের সংসারে টেনেটুনে দিন যেত। আজকে প্রশাসন আমাদের সহযোগিতার কথা বলছে, তা দিয়ে কয়দিন চলবে। তবে এমন বেপরোয়া গতিতে যেনো কারও প্রাণ না যায়।”
শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার শেরপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আলালপুর এলাকায় বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ অটোরিকশার সাত যাত্রী প্রাণ হারান।
আলামিন বাদে নিহত বাকিরা হলেন- ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুরের আশাবট গ্রামের বাসিন্দা বাবলু আহমেদ (৪৫), তার স্ত্রী শিলা আক্তার (৩৫), তাদের ছেলে মো. সাদমান (৭), সিংহেস্বর এলাকার আব্দুল বারেক মণ্ডল (৫৫) ও ধোবাবাউড়া উপজেলার গোলাম মোস্তফা (৫০)। একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।