“যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ না পাব, ততক্ষণ আমরা এই টিকা উঠিয়ে নেব না,” বলেন তিনি।
Published : 08 May 2024, 04:19 PM
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে কিনা, তা খুঁজে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেছেন, “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো প্রমাণ পেলে ওইসব টিকা দেওয়া হবে না। তবে যতক্ষণ সেরকম কোনো প্রমাণ না পাব, ততক্ষণ আমরা এই টিকা উঠিয়ে নেব না।”
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ও ভ্যাক্সজেভরিয়া টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মামলা এবং এসব টিকা বিশ্ববাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার আলোচনার মধ্যে এ কথা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বুধবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী বলেন, ওই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি শুনেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
“আমি ডিজি হেলথকে নির্দেশ দিয়েছি। যাদেরকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের ওপর সার্ভে করে আমাকে প্রতিবেদন দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রমাণ না পাব, ততক্ষণ আমরা এই টিকা উঠিয়ে নেব না।”
করোনাভাইরাস মাহামারীর সময়ে ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোভিশিল্ড ও ভ্যাক্সজেভরিয়া টিকা বিভিন্ন দেশের মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদন হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। আর ইউরোপে তৈরি একই টিকার নাম তারা দেয় ভ্যাক্সজেভরিয়া।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। শুরুতে সবাইকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দেওয়া হয়। পরে চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা কেনে সরকার। কোভ্যাক্স থেকে মার্ডানার টিকাও আসে। চতুর্থ ডোজে বয়স্কদের দেওয়া হয় ফাইজারের টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, এ পর্যন্ত দেশে ১৫ কোটি ৯ লাখের বেশি টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ১৪ কোটি ২২ লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে। সেইসঙ্গে ৬ কোটি ৮৬ লাখের বেশি তৃতীয় ডোজ এবং ৫১ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি চতুর্থ ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ৭৬৮ ডোজ দেওয়া হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
এই টিকায় শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার মত বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়, যেটি পরে স্বীকারও করে কর্তৃপক্ষ।
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু ও শারীরিক জটিলতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণের দাবিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানকার একটি আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে, ‘খুবই বিরল ক্ষেত্রে’ কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যার ফলে ‘টিটিএস’ বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ হতে পারে।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববাজার থেকে কোভিড টিকা তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
কোভিডের নতুন নতুন ধরনের আবির্ভাব এবং সেগুলো প্রতিরোধে বাজারে পর্যাপ্ত হালনাগাদ ভ্যাকসিন থাকার কারণে নিজেদের চাহিদা কমার কথা জানিয়ে থেকে টিকা প্রত্যাহারের কথা বলছে এ কোম্পানি।
তবে বাংলাদেশ থেকে এ টিকা প্রত্যাহারের ব্যাপারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কর্মসূচি শক্তিশালী করতে বুধবার ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিইং’ আয়োজিত সভায় যোগ দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “টিকাদান কার্যক্রমে অসাধারণ সফলতা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। জনবলের অপ্রতুলতা থাকা সত্ত্বেও সারাদেশে কর্মীরা নিরলসভাবে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে অতি শিগগিরিই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো সরঞ্জামের সঙ্কট তৈরি না হয় এবং দাম না বাড়ে সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন সবচেয়ে জরুরি।
“ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের দুটি মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে। যদি ডেঙ্গুর উৎস না কমাই তাহলে যতই হাসপাতাল বানাই কাজ হবে না।”
সভায় অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, নাদিয়া বিনতে আমিন, ফরিদা ইয়াসমিন, অণিমা মুক্তি গোমেজ, কানন আরা বেগম, জ্বরতি তঞ্চঙ্গ্যা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব হেলথ মায়া ভানডেনেট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বার্ধান জাং রানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন-